Published : 13 Jun 2025, 07:51 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা ও বহিষ্কৃত যুবদল নেতার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের বুধন্তি গ্রামের এ ঘটনা ঘটে বলে জানান বিজয়নগর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম।
আহতরা হলেন- বিএনপি নেতা চমক ভূঁইয়া (৪৮), জাহাঙ্গীর আলম (৫২), আশিক মিয়া (৩৩), ফরিদ মিয়া (৫০), হান্নান মিয়া (৩৮), ইয়াসিন মিয়া (৪৫) এবং জহুরুল ইসলাম। বাকিদের নাম-পরিচয় যাওয়া যায়নি।
আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের দুই পা ভেঙে গেছে এবং আশিকের চোখে আঘাত লেগেছে। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধন্তি গ্রামের ভূঁইয়া গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চমক ভূঁইয়া। আর একই গ্রামের বদা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন যুবদল থেকে বহিষ্কৃত মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মিয়া। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে যুবদল নেতা মিজানের পক্ষের লোকজন বিএনপি নেতা চমক ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলা চালায়। পরে বিএনপির নেতার পক্ষের লোকজনও পাল্টা হামলা চালায়। দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। পরে বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের মাধবপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
বিএনপি নেতা চমক ভূঁইয়া বলেন, “রাতে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালায় মিজান। তারা তিনটি ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে বনের কুঞ্জি এবং ফসল কাটার দুটি কম্বাইন হারভেস্টারে আগুন দেন।
“এ ছাড়া হামলাকারীরা দুটি গাভি ও তিনটি বাছুর লুট করে নিয়ে গেছে। বাড়িতে অবশিষ্ট কিছুই নেই। হামলায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
মিজানের বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশের কাছ থেকে যুবলীগ নেতাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করে দল। আমি তাকে বহিষ্কার করার কেউ না। মিজান বিনা কারণে বাড়িঘরে হামলা ও আমার লোকজনকে মারধর করেছে।”
এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা চমক ভূঁইয়া।
বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মিজান বলেন, “ছোট একটি ভুলের কারণে দল থেকে আমার পদ স্থগিত করা হয়েছে। এরপর থেকে চমক ভূঁইয়ার ছেলেসহ তার লোকজন বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বলাবলি করছেন।
“বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিষয়টি মীমাংসা করতে চমক ভূঁইয়ার বাড়িতে যান। এ সময় তার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।”
পূর্ব বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে উপজেলার ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজীব আহমেদ বলেন, “চমক ভূঁইয়ার বাড়ির তিনটি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুরসহ বাড়ির বনের কুঞ্জি ও কম্বাইন হারভেস্টারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।”
বিজয়নগর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এ ঘটনায় বিকাল পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।