Published : 16 Jun 2025, 03:22 PM
জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের বাজার দর নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাষিরা। প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে এ আম বিক্রি হওয়ায় চাষির মুখে হাসি নেই।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, খিরসাপাত ছাড়াও একসঙ্গে আরও তিনটি জাতের আম বাজারে ওঠায় দামের দরপতন হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের আগে পরে টানা ১০ দিন ছুটি থাকায় বাজারে পাইকারদের অনুপস্থিতি দামে অনেকটা প্রভাব ফেলেছে।
সোমবার জেলা কানসাট আম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খিরসাপাত আম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা মণ দরে। যেখানে চাষিদের প্রত্যাশা ছিল মণ প্রতি অন্তত চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা।
এ ছাড়া বাজারে প্রতি মণ গুটি আম ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, লগনা আম ৭৫০ থেকে এক হাজার এবং ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা দরে; যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি।
মের শেষে কানসাট বাজারে আম নামতে শুরু করে। শুরুতেই বাজারে উঠে গোপালভোগ আম। দাম ছিল এক হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা মণ। আর খিরসাপাত আম বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টাকার ওপরে।
এরপর জুনের শুরুতে খিরসাপাত আম বিক্রি হয় দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে। তবে কোরবানির ঈদের দীর্ঘ ছুটির প্রভাবে ৪ জুন থেকে আমের দাম কমে যায়। দাম নেমে আসে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়।
ঈদের পরে ভালো দামের আশায় গাছ থেকে খিরসাপাত আম পাড়া বন্ধ রাখেন চাষিরা। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে বাগানের গুটি, ল্যাংড়া ও ফজলি আম পেকে যায়। ঈদের পরে সব আম একসঙ্গে নামে বাজারে। এতে আমের বাজার দর কমে যায়; চাপে পড়ে খিরসাপাতের বাজার।
শেষ পর্যায়েও খিরসাপাতের ভালো দাম না পাওয়ার কারণ হিসেবে আম চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের লম্বা ছুটিতে ঢাকা শহরসহ অন্যান্য শহর ফাঁকা থাকায় বাজারে আমের বিক্রি ও দাম কমে গেছে।
কানসাট আম বাজারের আড়তদার মো. ভাসানী বলেন, ঈদের ছুটিতে দীর্ঘসময় ব্যাংক বন্ধ থাকায় লেনদেন করতে পারেনি আয়তদার ও ব্যাপারীরা। নগদ টাকার অভাবে আম কেনা-বেচা কম হয়েছে।
কানসাট বাজারে আম কিনতে আসা অনলাইন প্লাটফর্মের ব্যবসায়ী ঢাকা উত্তরার পলাশ আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে খিরসাপাত আমের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনলাইন মার্কেটিং করতে পারেননি তারা। এ সময় খিরসাপাত আম তেমন বিক্রি হয়নি।
এখন বাজারে গুটি, ল্যাংড়া ও লখনাসহ অন্যান্য আম উঠেছে; এতে খিরসাপাত আমের বাজার দর কমেছে বলে জানান তিনি।
শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর এলাকার আম বাগানের মালিক আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, “ঈদের ছুটিতে আমের বাজার দর কমে গিয়েছিল। ঈদের পরে ভালো দাম আশায় তখন গাছের আম পাড়া বন্ধ রেখেছিলাম।
“এই ছুটির মাঝে প্রচণ্ড গরমে খিরসাপাতসহ অন্য আম পেকে গেছে। এখনও ঈদের আমেজ কাটেনি বাজারে ব্যাপারী আসছে কম; বাজার দর কম। তাই খিরসাপাত আমের কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছি না।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইয়াছিন আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমের ভরা মৌসুমের মধ্যে কোরবানির ঈদের কারণে ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে মানুষ গ্রামে চলে যান। বাজারে আমের সরবরাহ থাকলে ভোক্তা কম থাকায় আমের দাম কমে যায়।
বর্তমানে প্রচণ্ড গরম হওয়ায় দ্রুত আম পেকে যাচ্ছে; এতে একসঙ্গে খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লখনা ও গুটি জাতের আজ বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কমে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষে আস্তে আস্তে বাজার ঠিক হয়ে আসছে। অন্য আমের দাম ভালো পেলে, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন চাষি।
এ ছাড়া কৃষকদের লেট ভ্যারাইটিজ জাতের আম চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে; যাতে একসঙ্গে সব আম পেকে না যায় বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।