Published : 03 Aug 2024, 11:43 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে খুলনায় সংঘর্ষে নিহত পুলিশের কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামীকে বাগেরহাটে সমাহিত করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় পারিবারিক রীতি অনুযায়ী সুমনকে কচুয়া উপজেলার কিসমত মালিপাটন গ্রামে বাড়ির উঠানে সমাহিত করা হয়।
সুমন (৩৫) কিসমত মালিপাটন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল কুমার ঘরামি ও গীতা রানী ঘরামির ছেলে। এক ভাই, এক বোনের মধ্যে সুমন ছোট।
সুমন স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা ঘরামীকে নিয়ে খুলনার দোলখোলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (সোনাডাঙ্গা জোন) দেহরক্ষী ছিলেন।
শুক্রবার বিকালে খুলনার গল্লামারি এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আন্দোলনকারীরা সুমনকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ করে পুলিশ।
সকাল থেকে স্বজন ও প্রতিবেশীরা গ্রামের বাড়িতে তার লাশের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সুমনের বাবা সুশীল ঘড়ামি তিনবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে প্রথমে কিছু জানানো হয়নি। শেষ বিকালে ছেলের মৃত্যুর খবর তাকে দেওয়া হয়।
মা গীতা রাণী অবশ্য শুক্রবার রাতেই ছেলের মৃত্যুর খবর পান। সেই থেকে বিলাপ করছেন তিনি। তাকে পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। স্বজনরা কিছুতেই তাকে সাত্বনা দিতে পারছিলেন না।
দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুমনের মা গীতা রাণীকে তার বোন, মেয়েসহ অন্য স্বজনরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কিছুতেই থামছে না তার কান্না, বিলাপ।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, “বন্দুক কি আনছো, তোমরা বন্দুক আনছো, হেইলে কও। হেইলে ওই বন্দুকটা দিয়া আমার বুকটার উপর একটা গুলি করো। আমি আমার বাবার লগে চইলে যাবো।”
বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত স্বজন প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সকাল থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী স্থানীয় হরি মন্দিরের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন সুমনের জন্য। এই মন্দিরের পেছনেই কনস্টেবল সুমনের ঘর। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ‘বীর নিবাস’ ঘর পেয়েছেন তারা।
প্রতিবেশী ও সুমনের বন্ধু সমর কৃষ্ণ ঘরামী বলেন, “আমরা একসঙ্গে এসএসসি পাস করছি। এরপর সে পিরোজপুরের বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এর কিছুদিন পর পুলিশে যোগদান করেন সুমন।”
পলি রানী ঘরামী বলেন, “সুমন ছিলেন সদালাপী। পাড়া প্রতিবেশি সবাই তাকে খুব ভালবাসত। প্রতিবেশিদের বিপদ হলে তিনি পাশে দাঁড়াতেন। আমরা তার এমন মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছি। তাকে যারা মেরেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
সুমনের বড় বোন সুমনা ঘরামীর ছেলে অর্পণ সমাদ্দার বলেন, “আমার মামা ভাত খাইতে বসছিল। তখন ফোন আসছে ডিউটিতে যেতে হবে, খাইতেও পারেনি। চলে গেছে এই শুনছি।”
মোবাইলে মামার ছবি দেখিয়ে তিনি বলছিলেন, “তাকে এভাবে মেরে ফেলল। মানুষ তো, একটু কি মায়া হলো না? মামার হত্যাকারীদের বিচার করি।”
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান বলেন, “হিন্দুরীতি মেনে সুমনকে শনিবার সন্ধ্যায় বসত ঘরের সামনে সমাহিত করা হয়েছে।”