Published : 14 Jan 2025, 10:12 AM
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বলেশ্বর নদী একসময় আন্তর্জাতিক নৌপথের অংশ ছিল। খরস্রোতা এই নদীকে ঘিরে ঝালকাঠি বন্দর এবং বাখরগঞ্জ হয়ে উঠেছিল দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র। আর পিরোজপুর ছিল তার ‘ট্রানজিট রুট’।
তবে সেসব এখন সোনালি অতীত। বরং পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতায় গতি হারিয়েছে এ নদী। ভাঙন থেকে শহর রক্ষায় বাঁধের নামে অপরিকল্পিতভাবে ব্লক ফেলায় নদী এখন মৃতপ্রায়।
এলোমেলো ব্লকের জন্য তীরে ভিড়তে পারে না নৌযান। এতে বন্ধ হচ্ছে নৌপথে পণ্য পরিবহন, ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ডাম্পিং করা ব্লকের আশপাশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ।
মাঝ নদীতে জেগে ওঠা চর অবৈধভাবে দখলে নিচ্ছে দখলদাররা। গড়ে তুলছে কৃষি ভূমি আর ব্যক্তিগত স্থাপনা।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে পিরোজপুর শহরের খেয়াঘাট ও এর সংলগ্ন এলাকার ২১৯ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুনা ট্রেডার্স-মাইসা ট্রেডার্স।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কাজটি শেষ করার সময়সীমা ছিল ২০২২ সালের মে মাসে। এ প্রকল্পের কাজে নদী তীর সংরক্ষণে ঠিকভাবে ব্লক প্লেসিংয়ের কাজ করা হয়নি। বরং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে মাঝ নদী পর্যন্ত ব্লক ডাম্পিং করে রাখে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মচারী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্লক ফেলার কাজটি সঠিকভাবে করেনি। আর পুরো বিষয়টি হয়েছে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সে সময়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান খান আসাদ বলেন, “ব্লকের কারণে নদীর পাড়ে পণ্যবাহী নৌযান ভিড়তে পারে না। তাছাড়া ডুবো চরের কারণে কোনো জাহাজ আসতে পারে না। এতে আমরা ব্যবসায়কিভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
“পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদাররা এই ব্লকের কাজ যখন করছিল তখন আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম যেন ঠিকমতো ব্লকগুলো দেয়। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনেই নিজেদের ইচ্ছেমত ব্লক ফেলতে থাকে। আর এখন সংকটে আমরা।”
বলেশ্বর খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি জগো বলেন, আগে এ নদীতে বড় বড় কার্গো জাহাজে করে সরকারি খাদ্যশস্য এবং ইট, বালু, পাথর পরিবহন করা হত। এখন ব্লকগুলির জন্য খেয়া নৌকাও চালাতে পারি না। খেয়া নৌকাসহ ছোট ছোট ট্রলার নদীর মাঝখানে নোঙর করতে হয়।
“এ ছাড়া নৌকা চালাতে গেলে নদীর মাঝের ডুবোচরে আটকে যায়। আবার নদীর মাঝে থাকা ব্লকে বেঁধে নৌকার তলে ফাটল ধরে, যার জন্য কিছু দিন পর পর নৌকা মেরামত করতে হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখন দ্রুত নদী যদি পুনঃখনন না করে তাহলে এ শহরে বসবাস করার মত কোনো অবস্থা থাকেবে না। বর্ষার সময় নদী ভরাট হয়ে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। বলেশ্বর নদী খনন ও ব্লকগুলি অপসারণ করা দরকার।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুরের নির্বাহী কর্মকর্তা নুসাইর হোসেন বলেন, “ড্রেজিং হলে বলেশ্বর নদীর নাব্যতা সংকট কেটে যাবে এবং নদীতে স্রোতের পরিমাণ বেড়ে যাবে। তখন এ সংকট কেটে যাবে।”
এর মধ্যে বলেশ্বর নদীর ৯০ মিটার ড্রেজিং করার জন্য খুলনা আঞ্চলিক ড্রেজার অপারেশন বিভাগে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।