Published : 01 Jun 2025, 05:52 PM
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে এক নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
আখাউড়া থানার ওসি মো. ছমিউদ্দিন জানান, উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ঘোলখার গ্রামে শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহত রুনা আক্তার (৩২) আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রানীখার গ্রামের সাবেক শিক্ষক শেখ নাছির উদ্দিনের মেয়ে।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী সাইদুর রহমানকে আটক ও শ্বশুর আবদুস সালামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। সাইদুর ঢাকায় একটি সেলুনে কাজ করেন।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা বলছেন, তিন বছর আগে পাশের ঘোলখার গ্রামের সাইদুর রহমানের সঙ্গে রুনা আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দশ মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকসহ পারিবারিক নানা বিষয়ে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন রুনাকে নির্যাতন করে আসছিল। সম্প্রতি সাইদুর গ্রামের বাড়িতে জমি কেনার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা নেন। এরপর শ্বশুরবাড়ি থেকে আরও টাকা আনার জন্য স্ত্রী রুনার ওপর সাইদুর ও তার বাড়ির লোকজন চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো।
অপরদিকে গত কয়েক মাস ধরে স্ত্রীকে ঢাকা নিয়ে যেতে চেয়েছিল সাইদুর। কিন্তু রুনা এতে রাজি ছিলেন না। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ তীব্র আকার ধারণ করে। গত শনিবার রাতে পারিবারিক কলহ এবং স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকায় নেওয়ার আলোচনা তুলেন সাইদুর। আলোচনার এক পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ফের কথা কাটাকাটি ও কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সাইদুর। খবর পেয়ে রুনার বাবার বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আখাউড়া থানার এসআই শিরিন আক্তার বলেন, “নিহতের বুকের বাম পাশে একটি সাড়ে সাত ইঞ্চি গভীর ও দুই ইঞ্চি প্রশস্ত ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার বুকের নিচেও কাটা জখম দেখা গেছে।”
নিহতের বড় ভাই শেখ জসিম উদ্দিন বলেন, “আমার বোনকে দিনের পর দিন শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। শেষ পর্যন্ত তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
ওসি ছমিউদ্দিন বলেন, “রুনা আক্তার নিহত প্রায়ই রাগ করে বাবার বাড়ি চলে যেতেন। সাইদুর তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি ছিলেন না। পারিবারিক কলহ ও ঢাকা যেতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন সাইদুর।
“এ ঘটনায় সাইদুরকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে। আর নিহতের শ্বশুর আব্দুস সালামকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে সদর থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।”
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করেনি বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।