Published : 14 May 2025, 09:25 AM
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার একটি সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কমলাবাড়ী ইউনিয়ন ও আশপাশের গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
উপজেলার কুমড়ীরহাট থেকে কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা দিয়ে পার্শ্ববতী কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ও চলবলা ইউনিয়নসহ কমলাবাড়ী ইউনিয়নের মানুষেরা যাতায়াত করেন।
কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের মাত্র দুই কিলোমিটার অংশ পাকা, বাকিটা এখনো কাঁচা রাস্তা। আবার ২০০২ সালে নির্মাণের পর থেকে কোনো সংস্কার না হওয়ায় পাকা অংশটুকুও এখন বেহাল।
রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড়-বড় গর্ত, খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সতী নদী, প্রতি বর্ষাকালেই স্রোতের তোড়ে রাস্তার অংশবিশেষ ভেঙে পড়ছে সে নদীতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় নানা প্রতিশ্রুতি থাকলেও কাজের সময় জনপ্রতিনিধিরা এ সড়কের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। ফলে প্রায় দেড় দশক ধরে সড়কটিতে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাকা অংশের বেশিরভাগ পিচ উঠে গেছে। সড়কজুড়ে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেসব গর্তে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে, যা একদমই চলাচলের অনুপযোগী।
এমন বেহাল সড়ক দিয়েই প্রতিদিন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, কৃষিপণ্য পরিবহনের গাড়িসহ শতশত যানবাহন চলাচল করে। ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান চালকরা।
ভ্যানচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, “এ রাস্তায় গাড়ি চলতে গেলে গর্তে পড়ে বিকল হয়ে যায়। তখন যাত্রীদের নামিয়ে হাত দিয়ে ঠেলে পার করতে হয়।”
সড়কে চলাচলকারী কৃষক হুজাইফা বলেন, “চলতে গেলে কলিজাটা ছাংগাত করি উঠে। অটো রিক্সাত উঠলে গর্তে পড়ে নাড়ি-ভুড়ি উল্টি যাবার চায়।”
কমলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসে। দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অভিভাবকরাও শঙ্কায় থাকেন। দ্রুত রাস্তা সংস্কার না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
কুমড়ির হাট বাজরের ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, “গত সরকারের সময় এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত থাকার কারণে শুধু এই রাস্তাটি নয়, গোটা ইউনিয়নের কোনো রাস্তার কাজই হয়নি।
চন্ডিমারী এলাকার বাবুর আলী বলেন, “এই রাস্তাটি চলাচল করা একেবারেই বিপদজনক। আর বর্ষাকালে তো সেটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে যায়। তখন এলাকার মানুষের কষ্টের আর সীমা থাকে না।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বারবার আবেদন করলেও রাস্তাটি সংস্কারের কাজ হয়নি।
রাজনৈতিক উপেক্ষা ও স্থানীয় বিরোধের কারণেই উন্নয়ন কাজ আটকে আছে বলে তার অভিযোগ।
কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি বলেন, “এই রাস্তা শুধু যোগাযোগই নয়, এটি আমাদের ইউনিয়নের প্রাণ। এখানে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হয়, যা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। কিন্তু রাস্তার কারণে কৃষকরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না।”
তিনি বলেন, “আমরা রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বারবার আবেদন করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”
এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলার প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক বলেন, “রাস্তার পাকা অংশটি আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
“বাকি ২ দশমিক ১ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে এলজিইডি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।”
বর্ষার আগে কাজ শুরুর সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে কাজ করা হবে। তবে সময় নির্দিষ্ট করে তো আর বলা সম্ভব নয়।”
এ সময় নদীভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।