Published : 17 Jun 2025, 08:29 PM
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু সংক্রমণের ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ রেডজোন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। গত এক মাসে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তিন নারীরও মৃত্যু হয়েছে।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মঙ্গলবার বলেন, “দাউকান্দিতে এই মৌসুমে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার ৯০ শতাংশ রোগী ৫ ও ৬ নম্বর এলাকা থেকে আসা। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি।”
মারা যাওয়া তিন নারী হলেন- দোনারচর গ্রামের সালমা বেগম (৫৬), শাহীনূর আক্তার (২৪) ও সবজিকান্দি গ্রামের জ্যোৎস্না বেগম (৬০)।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাস থেকে এই পর্যন্ত হাসপাতালে ১০৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৮ জনকে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আরও ২৫৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে দাউদকান্দি উপজেলায় এ পর্যন্ত আনুমানিক ৭০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিভাগের।
এর মধ্যে পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ বেশি হবে বলে ধারণা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের।
দাউদকান্দি পৌর এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দোনারচর, সবজিকান্দি, দাউদকান্দি, সাহাপাড়া, বলদাখাল ও তুজারভাঙ্গা গ্রামগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সংবাদকর্মী লিটন সরকার বাদল বলেন, মে মাসের শুরুতে যখন সংক্রমণ বেশি হচ্ছে ধারণা করা হয়- তখন কেউ সচেতন হয়নি। এর মধ্যে একবার বৃষ্টি হয়ে আবার অনেকদিন বন্ধ থাকায় বদ্ধ ডোবা-নালায় বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং জুনের শুরুতে ঈদের পর পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
“সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দোনারচর এবং সাহাপাড়ায়। কেউ পরীক্ষা না করালেও ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর, হাত-পা ব্যাথাসহ নানান উপসর্গ নিয়ে ভোগছেন। মূলত শুরুতে সচেতন না হওয়ায় সংক্রমণ বেড়ে গেছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, “৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো না। ডোবা-নালায় পানি জমে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে একটি ক্লাস্টারে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে অন্যান্য এলাকায়ও এখন ছড়াচ্ছে।
“সাধারণ ডেঙ্গু চিকিৎসার সব ব্যবস্থা আমাদের উপজেলায় আছে, তবে জটিল ডেঙ্গুর উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় রেফার করা হচ্ছে। তবে সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সতর্কতা এবং সচেতনতার বিকল্প নেই।”
দাউদকান্দি পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম বলেন, “আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে দুটি ওয়ার্ডকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলে ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধে মশক নিধন কর্মসূচি গ্রহণ করছি। ফগার মেশিনের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করছি। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।”