Published : 12 Apr 2023, 02:01 PM
পুরানো বছরের দুঃখ জরা ভুলে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় খাগড়াছড়িতে চলছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’। চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে ফুল ভাসিয়ে পুজা ও প্রার্থনা করে বর্ণিল ‘ফুল বিজুর’ মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
রীতি অনুযায়ী চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় এই আয়োজন। এ জন্য বুধবার ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই চেঙ্গী ও মাইনী নদী তীরে জড়ো হন হাজারো মানুষ।
নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতা, রঙ্গনসহ নানা রকমের ফুল নদীতে ভাসিয়ে গঙ্গা দেবী ও উপগুপ্ত বুদ্ধের পুজা করেন চাকমা তরুণ–তরুণীরা। পরে নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দ্যেশে প্রার্থনা করা হয়।
ফুল বিজুতে অংশ নেওয়া নুপুর চাকমা বলেন, “গত বছরের যতো দুঃখ কষ্ট গ্লানি ভুলে গিয়ে আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিব। তাই প্রতিবছর আমরা এখানে জড়ো হই।’
উৎসবে অংশ নেয়া ডক্টর রাজষী চাকমা, “ফুল দিয়ে উপগুপ্ত বুদ্ধকে পুজা করি। ফুল দিয়ে ঘর সাজাই। নতুন বছরকে বরণ করি এবং পুরনো বছরকে বিদায় জানাই।”
ফুল বিজুর মাধ্যমে পাহাড়ে যে উৎসব শুরু হয়েছে তার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে মনে করেন বৃহত্তর খবংপুড়িয়া বিজু উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ধীমান খীসা।
তিনি বলেন, “আমরা দীর্ঘ বছর ধরে এখানে ফুল বিজু উদযাপন করি। নতুন বছরকে বরণ করতেই আমরা নদীতে ফুল দিয়ে পুজা করি।”
সকালে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “এই ধরনের উৎসবের মধ্য দিয়ে পারস্পারিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শান্তির দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমাদের অনুভূতি অসাধারণ। শান্তি ও সম্প্রীতি আরো উন্নত হবে, আরও মজবুত হবে।”
ফুল বিজু উৎসবে অংশ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক জানান, “অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও নিরাপত্তায় কাজ করছে।”
এই ‘ফুল বিজু’ মূলত চাকমাদের বর্ষবরণের উৎসব হলেও সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধনে তা সার্বজনীন রূপ নেয়। পাহাড়ের এই উৎসব দেখতে আসেন পর্যটকরাও।
তেমনি ‘ফুল বিজু’তে অংশ নিতে আসা রেহানা ফেরদৌসী জানান, “এই উৎসবের কথা বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। আজকে প্রথমবারের মতো এখানে আসার সুযোগ হয়েছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে এসেছি। আমার খুবই ভালো লাগছে। এমন বর্ণিল আয়োজন সত্যিই মুগ্ধ করে।”