Published : 30 May 2025, 08:40 PM
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, এতে চরফ্যাশন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় পাঁচ সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে সহস্রাধিক গবাদি পশু।
চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় এখনও তিন থেকে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এ ছাড়া লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার দুই স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
অপরদিকে জোয়ারের পানিতে ২৩৪টি ঘের ও দুই হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৮টি ঘরবাড়ি। এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার কাজ চলছে।
“এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে।”
স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঢালচরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতির মুখে পড়েছে। চর কুকরি-মুকরির চর পাতিলা ও মুজিবনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। এ তিন ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক গবাদি পশু গরু-ছাগল পানিতে ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মনপুরা উপজেলার কলাতলির চরসহ বাঁধের বাইরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এই এলাকায় তিন সহস্রাধিক ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানও বেশকিছু গবাদি পশু ভেসে গেছে। এখনও কিছু কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ, রমাগঞ্জ, ধলীগৌরনগর, চরভূতা ও পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ২০টি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত ৫০০টি বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দুইটি গ্রাম ও অতিবৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানির কারণে চরকচুয়াখালী এবং পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, “উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সাত থেকে আটশ গবাদিপশু ভেসে গেছে। এখনও পানিবন্দি রয়েছে দুই হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।”
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বণিক বলেন, “কলাতলি ইউনিয়নে বাঁধ না থাকায় পানিতে সেখাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলায় বাঁধের বাইরে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তিন হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্তের খবর পাওয়া যায়নি।”
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা বলেন, “মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লালমোহনের সৈয়দাবাদ ও তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় বেড়িবাঁধ ছুটে যায়। এতে লালমোহনে ২০ মিটার ও তজুমদ্দিনে ১৫ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লালমোহনের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে এবং তজুমদ্দিন উপজেলার বাঁধ সংস্কার কাজ চলছে।”
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, “নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলা জেলায় ২৪৩টি ঘের ও দুই হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ চলে গেছে। এ ছাড়া ১৪০টি মাছ ধরার ট্রলার ও ৬৫টি মাছ ধরার জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।