Published : 10 May 2025, 03:11 PM
মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে একটি লঞ্চে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে দাঁড় করিয়ে পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। কোমরের বেল্ট দিয়ে দুই তরুণীকে পেটানোর একটি ভিডিও এরই মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা তিনতলা লঞ্চ ‘এম ভি ক্যাপ্টেনে’ এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির।
তিনি বলেন, “ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের উঠতি বয়সী ৩০০-৪০০ ছেলে-মেয়ে পিকনিক ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এমভি ক্যাপ্টেন নামের লঞ্চটি ভাড়া করে। লঞ্চটি চাঁদপুর ঘুরে ঢাকায় ফেরার পথে খাবার কেনার জন্য মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে নোঙর করে।
“এ সময় ৮-১০ জন যাত্রী চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য নিচে নামলে বিষয়টিতে লঞ্চঘাটে থাকা ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়। তখন ঘাটে থাকা ৫০-৬০ জন মানুষ লঞ্চে উঠলে লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। লঞ্চের লোকজন তাদের বাধা দেন।
“একপর্যায়ে লঞ্চে থাকা ছেলেমেয়েদের হেনস্তা ও মারপিট করা হয় এবং তারা লঞ্চে ভাঙচুর চালায়। এ সময় দুই নারীকে লঞ্চের সামনে এনে প্রকাশ্যে প্রহার করে এক যুবক।”
এ ঘটনার একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বলেন, পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে লঞ্চটিও ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।
হামলাকারীরা মারধর করা ছাড়াও মোবাইলসহ নানা কিছু নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ঘটনার সময় সেখানে গিয়েছিলেন মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান।
তিনি বলেন, “আমরা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আমরা লঞ্চটিকে অনেক দূর পর্যন্ত পাহারা দিয়ে এগিয়ে দিয়ে এসেছি। লঞ্চে থাকা স্টাফ এবং পিকনিকে আসা যাত্রীরা বলেছেন তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ নিয়ে আসেনি জানিয়ে ইনচার্জ আতাউর বলেন, “পিকনিকে আসা যাত্রীরা অভিযোগ করেছিলেন, হামলাকারীরা তাদের টাকা-পয়সা এবং মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
দুই নারীকে লঞ্চের সামনে এনে প্রকাশ্যে প্রহার করে ভিডিওটি তিনি দেখেছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, “এখনও কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে। নৌপুলিশ বিষয়টি যোগাযোগ করছে।”
তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “সন্ধ্যার দিকে কিছু কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী লঞ্চ থেকে পন্টুনে নামেন। সেখানে থাকা স্থানীয়রা তাদের মাদকসেবী বলে সন্দেহ করে। তখন তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে উঠার চেষ্টা করে তারা।
“লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের বাধা দেয়। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুট ও যাত্রীদের মারপিট করেন।
তিনি আরও বলেন, “পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে। ঘটনাটি যেহেতু নদীতে ঘটেছে এ বিষয়ে নৌ পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে শুনেছি।”
এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা রঙের পোশাক পরিহিত আনুমানিক ১৫-১৭ বছর বয়সী এক নারীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে কোমরের বেল্ট দিয়ে বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন এক যুবক। এক সময় সেখানে চেক জামা পরিহিত আরেক নারীও ছিলেন।
যখন তাদের পেটানো হচ্ছিল তখন ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছিল। তারা ঘটনার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল।
মুন্সীগঞ্জে কর্মরত কয়েকজন সংবাদকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে যুবক ওই দুই নারীকে বেল্ট দিয়ে মারছিলেন তার নাম নেহাল আহমেদ জিহাদ। তিনি মুন্সীগঞ্জ শহরেরই বাসিন্দা।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার আগে স্থানীয় একজন সংবাদকর্মীর কাছে তিনি ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা জানান।