Published : 20 May 2025, 07:37 PM
খাগড়াছড়িতে নানা আয়োজনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে এ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সমর্থিত দুই ছাত্র সংগঠন আলাদাভাবে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা করেছে।
খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। এর আগে মহাজন পাড়া থেকে মিছিল বের করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা; যা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে গণসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের শুরু হয়। এতে বক্তব্য দেন জনসংহতির সমিতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনজাতিসমূহের ওপর জাতিগত নিপীড়ন-নির্যাতনের শাসনব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে। ১৯৯৭ সালে পাহাড়ে শান্তি চুক্তি হলেও এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।
“আজও পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন-নিপীড়ন অব্যাহত আছে। সেইসঙ্গে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, ভূমি দখলসহ নানা অপতৎপরতা চলমান রয়েছে।”
২৭ বছর পরও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনের দাবি করেন সুধাকর ত্রিপুরা।
ইউপিডিএফকে (প্রসীত) ‘চুক্তিবিরোধী’ সংগঠন দাবি করে তিনি বলেন, “১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দেশে-বিদেশে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সংগঠনটি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিশান চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালের ৪ মে রাঙামাটির লংগদুতে ‘গণহত্যা’ সংঘটিত হয়। সেই হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে একই বছরের ২০ মে বুয়েটের ‘রশীদ হলের’ ২০০২ নম্বর কক্ষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বা পিসিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
সেই থেকে সংগঠনটি জেল, জুলুম, হত্যা, মামলাসহ নানা নিপীড়ন-নির্যাতনকে সাথী করে তিন যুগ পার করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কৃতিত্ব চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের আহ্বায়ক মায়া চৌধুরী, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি কাকলী খীসা এবং ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ বক্তব্য দেন।
একই দিন খাগড়াছড়ি শহরে ‘জাতীয় ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে ছাত্র ও যুব সমাজের বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন’ স্লোগানে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সমর্থিত পিসিপি ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভা করেছে।
সকালে খাগড়াছড়ি মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
পরে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন করে ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভায় অংশ নেন নেতাকর্মীরা।
পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কলিন চাকমার পরিচালনায় এতে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিটন চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক অমর জ্যোতি চাকমা এবং খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আলোকময় চাকমা বক্তব্য দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও লড়াই সংগ্রামে ঐক্যের ওপর জোর দেন নেতারা।
শান্তির পথ ধরে পাহাড়কে এগিয়ে নিতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা।