Published : 11 Aug 2024, 12:05 AM
তীব্র গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কার্যত সরকারবিহীন চার দিনে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সারাদেশে ছড়িয়েছে সহিংসতা।
জেলায় জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় নেতাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় বিএনপি নেতাদের বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভাঙচুর-লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে কোথাও কোথাও।
হামলা হয়েছে থানাতেও; অস্ত্র লুট, পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি হামলা হয়েছে পুলিশ সদস্যদের ওপর। মঙ্গল ও বুধবারেও অনেক জায়গা থেকে পুলিশের লাশ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
কয়েকটি কারাগারে বন্দি বিদ্রোহের পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক দুর্ধর্ষ জঙ্গি, দাগি আসামি পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে।
বেশ কয়েকটি জেলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিরূপ পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীরাও নিরাপদ বোধ করছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সঠিক ও সব তথ্য সংগ্রহ করাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
সারাদেশে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবার পর্যন্ত অনেক জায়গাতেই ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খোলেনি। সড়কে মানুষের চলাচল ছিল কম। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়িঘর থেকে বের হয়নি।
সন্ধ্যার পর মফস্বলের অনেক সড়কই ফাঁকা দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে এলাকাছাড়া।
অনেক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা, মন্দির, উপাসনালয় ঘিরে রাতের বেলায় সাধারণ মানুষের পাহারা দেখা গেছে। তাতে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও যোগ দিচ্ছেন। একে ‘আতঙ্কের মধ্যেও ভরসা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা হামলা, সহিংসতার খবর পাঠিয়েছেন। গত পর্বে ১২ জেলার খবর দেওয়া হয়েছিল। এই পর্বে আরও ১০ জেলার চিত্র তুলে ধরা হল।
বরিশাল
বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডে ৪ অগাস্ট সকালে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন দেওয়া হয় বাসার সামনে থাকা ২৭টি মোটরসাইকেলে।
নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় নগরীর সদর রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে। সেখানেও দুইটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অশ্বিনী কুমার হলের জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়।
পরদিন সোমবার নগরীর কালী বাড়ি রোডে সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট হয়। ওই বাসা থেকে তিনজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
নগরীর বগুড়া রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাসায় ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করা হয়। বিবি পুকুরের পূর্ব পাড়ে সিটি করপোরেশনের এনেক্স ভবনে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট হয়। ভাঙচুর চালানো হয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতেও।
নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর করে চালসহ সব মালামাল লুট করা হয়। ভাঙচুর-লুটপাট হয় বরিশাল ক্লাবে। ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড রোডে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের ‘বীর উত্তম ভবনে’ ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
নগরীর ফজলুল হক অ্যাভিনিউ রোডে সিটি কর্পোরেশনের ভবনেও ভাঙচুর হয়। পাশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও ভাঙচুর-লুটপাট চলে। রক্ষা পায়নি সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর নগরীর কালুশাহ সড়কের ভাড়া বাসাও; সেখানে ভাঙচুর হয়েছে।
নগরীর বান্দ রোডে জেলা শিল্পকলা একাডেমির গার্ডরুম ও জেলা কালচারাল কর্মকর্তার যানবাহনসহ চারটি গাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। নগরীর আওয়ামী লীগপন্থি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কার্যালয় এবং দুই কাউন্সিলরের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট করা হয়।
তাণ্ডব চালানো হয়েছে বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুর বাসভবনে। বেলতলা এলাকায় সুন্দরবন লঞ্চের ডক ইয়ার্ডে লুটপাট হয়েছে। আগরপুর রোডে বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে, বরিশাল সার্কিট হাউজ ও বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের বাসা, গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিচুর রহমান হারিচের বাসায় ভাঙচুর-লুট হয়। বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের গরুর খামার থেকে ১৭টি গরু লুট হয়েছে, সেখান থেকে ইট বিক্রি করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
জামালপুর
সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের ৭ বারের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের বকুলতর বাড়িতে ভাঙচুর হয়। সেখানে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
একই সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয় সাবেক এই বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর শহরের মেডিকেল রোডের বাসা, দেউরপাড় চন্দ্রায় আলেয়া গার্ডেন এবং নির্বাচনি এলাকা মাদারগঞ্জের বাড়ি।
একই সময়ে মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা গোলাম রব্বানী রিপনের শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মির্জা জিল্লুর রহমান শিপনের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মাদারগঞ্জে মির্জা গোলাম মওলা সোহেলের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট চালানো হয়েছে।
একইদিন শহরের বকুলতলা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহরাব হোসেন বাবুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট হয়। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুর নগদ এজেন্ট অফিস, ব্যক্তিগত অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পাট গুদামে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখান থেকে লুটপাট হয় ‘কয়েক কোটি’ টাকার সম্পদ।
ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে জামালপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর হোসেনের খেজুর বাসভবনে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ ও সহসভাপতি আমান উল্লাহ আকাশের বাড়িতেও ভাঙচুর এবং মালামাল লুটপাট হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সুরুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটের পাশাপাশি লুট করা হয়েছে পুকুরের মাছও।
জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম সজিবের সিঅ্যান্ডবি রোডে স্বপ্ন সুপার সপ ও মির্জা আজম চত্বরে তার ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর হয়েছে।
একইদিন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশার বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান এলিনের ‘এলিন মার্কেটের’ অন্তত ৭০টি দোকানে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও হামলা ভাঙচুর-লুটপাট হয়।
সিলেট
৫ অগাস্ট বেলা সোয়া ৩টার দিকে সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। পাশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা হয়। একই দিন বিকালে হামলা ও লুটপাট হয় ডিসি কার্যালয়ে।
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ও পোড়ানো হয়েছে। নগরীর উপশহরের এসএমপি কমিশনার, উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়, দক্ষিণ সুরমা, মোগলাবাজার, কোতয়ালি থানা, বন্দরবাজার, লামাবাজার ফাঁড়িতে ভাঙচুর-লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যায় হামলার চেষ্টা করা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। তখন কারারক্ষী ও নিরাপত্তাকর্মীরা তা প্রতিহত করেন। সেদিন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. শাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, "হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা সেটি ঠেকাতে পেরেছি। পরে সেনাবাহিনী সেখানে অবস্থান নেয়।"
নগরীর শাপলাবাগ এলাকায় প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবনেও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নগরীর ধোপাদিঘীরপাড় এলাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এমপির বাসায়, নগরীর আম্বরখানা এলাকায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বাসায় এবং গোপালটিলা এলাকায় সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসন থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচিত রণজিৎ চন্দ্র সরকারের বাসায় হামলা-ভাঙচুর হয়।
একই তাণ্ডব চলেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসভবন, নগরভবন এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহসভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসায়ও।
সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের বাসায় হামলা হয়েছে। আক্রমণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের শ্বশুর বাড়িতে। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদের বাসাও হামলা-ভাঙচুরের শিকার হয়।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের কার্যালয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. মখলিছুর রহমান কামরানের কার্যালয়েও হামলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজের বাসা ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদের বাসায়ও ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
হামলার শিকার হয়েছেন রেজওয়ানের বড় ভাই সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জাসদ সিলেটের সভাপতি লোকমান আহমদও।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক গোলাম সোবহান চৌধুরীর বাসভবনও আক্রান্ত হয়েছে।
নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থিত সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো. মবশ্বির আলী এবং সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের মালিকানাধীন ফার্মেসি ভাঙচুর ও লুটপাট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পীযূষ কান্তি দের বাসাবাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মাহাতে’। এছাড়া নগরীর ধোপাদিঘিরপার এলাকার হোটেল অনুরাগসহ নগরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণাধীন ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের নির্মাণ সামগ্রী লুটপাটের পাশাপাশি দুটি এক্সেভেটর ও একটা চেইন ডোজারসহ বিভিন্ন উপকরণ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভোলাগঞ্জ পর্যটন দেওয়াল, ভোলগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ ১০ নম্বর ঘাটের বিভিন্ন দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায় লুটপাট হয়েছে পাথর।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট এমসি কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং সোমবার রাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘চেতনা-৭১’ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। মঙ্গলবার সকালে কোতোয়ালি থানা প্রাঙ্গণে একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
মেহেরপুর
সরকার পতনের দিন মেহেরপুর শহরে তাণ্ডবে পুড়ে ছাই হয় হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসকনের জেলা কার্যালয়। সেখানে দুইটি মোটরসাইকেলেও পুড়িয়ে ফেলা হয়।
শহরের হোটেল বাজার মোড় মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পল্লব ভট্টাচার্য তরুণের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়।
ওইদিনই শহরে মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অলোক কুমারের বাড়িতে হামলা হয়।
হামলাকারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রী মেহেরপুর-১ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের বাড়িতেও হামলা করা হয়। তারা বাড়ির বাইরে থাকা দুটি মোটরসাইকেল এবং টিনসেড ছাউনিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শহরের সাহা বস্ত্রালয় এবং কাজল ব্যাটারিতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে সবকিছু ধ্বংস করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সদ্য সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর চাচাত ভাই স্বপন ইলেক্ট্রনিক্স দোকানে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ফরহাদের ঘনিষ্ঠ আমিনুল ইসলাম খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি, শহরের মল্লিক পাড়ায় মন্ত্রীর একনিষ্ঠ রাব্বি আহমেদ ইমনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হিরণ, দোলন, কুতুবের বাড়ি এবং শহরের ‘রেডি সুপার সপ’ মলে ভাঙচুর-লুটপাট করে আগুন দেওয়া হয়।
পরের দিন হামলা হয় মেহেরপুরের মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দেশের বৃহৎ মানচিত্র ও স্মৃতি কমপ্লেক্সে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ম্যুরালসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা।
একইদিন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু এবং তার ভাইদের সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সামাদের ছেলে তুর্য বিশ্বাস জানান, আগুনে তাদের বাড়ি পাশাপাশি পাঁচটি ট্রাক ও দুইটি ট্রাক্টর পুড়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ
৫ অগাস্ট বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর আসার পরই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুর হুদা মুকুটের বাসা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদারের বাসা, হক রেস্টুরেন্ট ও সিঙ্গার শোরুমে হামলা ও ভাঙচুর শুরু হয়।
গত ৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত মুহিবুর রহমান মানিকের বাসা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বম্ভর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হুমায়ুন কবিরের বাসায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়।
এসব সহিসংতার মধ্যে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ভয় ও আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
নরসিংদী
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শিল্পপতি অহিদুল হক আসলাম সানির বেলাব উপজেলার চর উজিলাব গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে।
বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইএনও) কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ও দরজা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে উপজেলা চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মজিদের বাড়িতে।
রেহাই পায়নি রায়পুরা উপজেলায় রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু (নরসিংদী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত) মিলনায়তন। সেখানে রাজু ভাস্কর্য ভাঙচুর, আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন শাহীন জেনারেল হাসপাতাল ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, রায়পুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হালিমের নিজ বাসভবনসহ তার শ্বশুর বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
রায়পুরা গোলচত্বরে মুজিব ভাস্কর্য ভাঙচুরসহ বিভিন্ন নেতার বাড়িঘর ভেঙেছে হামলাকারীরা। ভাঙচুর হয়েছে রায়পুরা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা মোহাম্মদ ইয়াসিন, শাকিল চৌধুরী ও রাতুলের বাড়িতে।
শিবপুরে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি খোকন ভুঁইয়ার বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটসহ দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভাঙচুর করা হয় শিবপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ আলম ভুইয়ার অফিস, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ গোস্বামীর পুটিয়া বাজারের দোকানে।
পলাশ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খানের বাড়ি হামলা-লুটপাট, অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
পলাশের ঘোড়াশাল পৌরসভা মেয়র আল মোজাহিদ হোসেন তুষারের বাড়ি-বাগান বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ হয়েছে।
পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম গাজী এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুল হক টিপুর বাড়িতে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ এবং তাদের দলীয় অফিস ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়াও অন্তত চারটি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ বেশ কয়েকটি মন্দির এবং মাজারে ভাঙচুরের হয়েছে।
সদরের সাহেপ্রতাপে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাদেব সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পৌর শহরের দীপক সাহাসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে।
দিনাজপুর
৫ অগাস্ট দিনাজপুরে দুটি থানা ও একটি পুলিশ ফাঁড়িসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের আটটি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের কমপক্ষে ২০টি বাড়ি এবং পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সেই সঙ্গে তিনটি বাড়িতে ডাকাতি এবং দুটি উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি দোকান লুটের ঘটনা ঘটেছে।
কুড়িগ্রাম
সোমবার জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও ইউএনও কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মতিনের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।
জেলার নয় উপজেলার শতাধিক স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।
হামলায় আহত হয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলী, সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মনজু এবং সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকুসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
সাংবাদিকদের অফিস ও বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের নেতারা ঘড়বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
রংপুর
রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সমবায় মার্কেট, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরে অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিস, ঢাকা ব্যাংকের বুথ, জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়, মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যালয়, জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার মার্কেট, নগরীর রোড ডিভাইডার, বঙ্গবন্ধু চত্বর ও রেলগেইট এলাকায় ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
গাইবান্ধা
৫ অগাস্ট রাতে পলাশবাড়ী উপজেলার ব্যবসায়ী শ্রী গোপাল চন্দ্র রায় ও তার ছোট ভাই গোকুল চন্দ্র রায়ের বসতবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বাড়িঘরে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুই ভাইয়ের যৌথ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইটভাটার পাঁচটি ট্রাক্টর।
ব্যবসায়ী শ্রী গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, ঘটনার দিন রাতে মাস্ক পরে ৩০ থেকে ৩৫ যুবক হাতে রাম দা, ছোড়া ও লাঠি নিয়ে বসতবাড়িতে হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে পরিবারসহ তিনি বাড়ির পাশে অন্ধকারে আশ্রয় নেন।
একইদিন বিকালে পলাশবাড়ী পৌর মেয়রের বাসা ও পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন দেওয়া হয় জান্নাত পরিবহনের বাসসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে।
পরের দিনও উপজেলা সদরের প্রফেসরপাড়ার কলেজ শিক্ষক অমলেশ মালাকারের বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও বাসভবন ভাঙচুর এবং লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ইউএনওর বাসভবনে থাকা দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। হামলাকারীরা পৌরসভা কার্যালয়ে বিতরণের জন্য রাখা টিসিবির মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এছাড়া সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান হিরুর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পরে হামলাকারীরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আসাদুজ্জামান হিরুর মালিকানাধীন ‘হিরো হোন্ডার’ শো-রুমে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ৪০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
একই দিনে গোবিন্দগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর শাহীন মিয়া ও রিমন তালুকদারের ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা।
গাইবান্ধা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনির বাড়িতেও হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়। পরে হামলাকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা জাসদ কার্যালয়, রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ট্র্যাফিক পুলিশ ক্যাপ, গাইবান্ধা পৌর মেয়র বাসা, কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিবের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
জেলা কৃষকলীগের নেতা ও স্থানীয় দৈনিক জনসংকেত পত্রিকার সম্পাদক দীপক কুমার পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও পত্রিকা অফিসে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী আকবর মিয়ার বসতবাড়িতেও। বাদ যায়নি শতবর্ষী গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি অ্যান্ড ক্লাব।
সুন্দরগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার পর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স ভাঙচুরসহ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে হামলাকারীরা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আলম রেজার ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
দহবন্দ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শামীম সরদার পারভেজের বসতবাড়ি, পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সহসভাপতি ও সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শুকুল চন্দ্র সরকারের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
সাদুল্লাপুর উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স, উপজেলা কৃষক লীগের কার্যালয়, উপজেলা শ্রমিক লীগের কার্যালয় এবং যুবলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
একই দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের গাইবান্ধা প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম রেজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা।
ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল ইসলাম ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। একই দিন সাংবাদিক হাবিবুর রহমানে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া বোনারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নাসিরুল হকের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেছে হামলাকারীরা। ভাঙচুর করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয় চত্বরের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। এ ছাড়া বেশকিছু হিন্দু ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে।