Published : 26 Mar 2025, 12:28 PM
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট। প্রতিবছর ঈদযাত্রায় মহাসড়ক দুটিতে যানজটে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে এবার যানজটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাকাতির শঙ্কাও।
পরিবহন চালক ও যাত্রীরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ‘ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা’ পরিস্থিতির কারণে মহাসড়ক দুটিতে প্রায়শই ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ঈদযাত্রায় তা আরও বাড়তে পারে।
তবে হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ঈদযাত্রার ভোগান্তি কমাতে মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। একইসঙ্গে ‘অনিরাপদ’ চিহ্নিত স্থানগুলোতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশেরও টহল-অবস্থান থাকবে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পথে চলাচল করা সেন্ট মার্টিন পরিবহনের সাইনবোর্ড কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. হাসান বলেন, “মেঘনা টোলপ্লাজা ও দাউদকান্দির পর ডাকাতির শঙ্কা বেশি থাকে। রাতের বেলা হাইওয়ের দুইপাশ থেকে ডাকাতদল এসে প্রায়ই গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করে। ঈদের যাত্রায় এই প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।”
অনেকক্ষেত্রে গভীর রাত কিংবা ভোরে মহাসড়কে নামার পর গন্তব্যে পৌঁছানোর পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন যাত্রীরা।
এ ছাড়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর মাধবদীর পর থেকেও সড়কটি খুব অনিরাপদ জানিয়ে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ডাকাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সেনা টহলেরও দাবি জানান হাসান।
যাতায়াত পরিবহনের চালক সুমন হাসান বলেন, “রাতে ডাকাতি হয় বেশি৷ যারা রাইতে চালায় তাদের বেশি ডাকাতির ভয় থাকে৷ আমি আগে রাতে চালাইতাম, একবার ডাকাতির কবলে পড়ছিলাম৷ দুই বছর হইসে রাতের কোনো ট্রিপ মারি না৷”
সিলেটগামী এনপি পরিবহনের কাউন্টারম্যান রাজীব বলেন, “ডাকাতির ভয় তো খালি যাত্রীর না, চালকদেরও থাকে৷ ঈদের সময় বাড়তি নিরাপত্তা থাকা প্রয়োজন৷ কারণ, ঈদের সময় ডাকাতি বা ছিনতাই বেশি হয়৷ ডাকাতির কবলে পড়লে চালকরা অভিযোগ করারও সুযোগ পান না৷”
পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের হিসাবে গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত এ মহাসড়কে অন্তত ১০০ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি।
অন্যদিকে শেষ ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রাতে বান্দরবান যাওয়ার পথে এ মহাসড়কের মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় ডাকাতদলের হামলার শিকার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
যানজটে আটকে পড়া তাদের মাইক্রোবাসে হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে ছাত্রনেতাদের মোবাইল, মানিব্যাগ লুট করে ডাকাতদল।
যাত্রী ও চালকরা বলছেন, আগেও এই মহাসড়কটিতে ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটলেও গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মহাসড়কটি আরও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
তবে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে দাবি করে হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আবু নাঈম বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুযোগ নিয়ে বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে সত্য৷ তবে, পরে টানা অভিযান ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এ ঘটনাগুলোকে কমানো সম্ভব হয়েছে৷
তিনি বলেন, “এবার ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল থাকবে৷ তাছাড়া, কেউ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জরুরি সাড়া দেবে।”
এদিকে, পরিবহন চালক, যাত্রী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর ঢাল থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট থাকে। এই মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ৩৫ কিলোমিটারে উন্নয়ন কাজ চলছে।
এ ছাড়া, এই সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত একলেনের এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) সড়কটিরও মদনপুর থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে। ২১ কিলোমিটারের সড়কটির বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
সোমবার সরেজমিনেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর, তারাব, রূপসী এলাকায় যানজট দেখা যায়৷ যদিও, এখনো ঈদযাত্রা শুরু হয়নি৷
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব এলাকায় কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী সোহাগ পরিবহনের চালক মো. রুবেলের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “এই সড়কে যানজটের লাইগা কোনো উৎসব লাগে না, সবসময়ই যানজট থাকে। তিন ঘণ্টার রাস্তা পার হইতে ছয় ঘণ্টাও লাগে। ঈদের সময় গাড়ির চাপ বাড়লে তো আর কথাই থাকে না।”
সড়কটির উন্নয়নকাজে ধীরগতির অভিযোগও করেন এ চালক।
অন্যদিকে যানজটের জন্য হাইওয়ে পুলিশের ‘উদাসীনতাকে’ দায়ী করেন এ মহাসড়কে নিয়মিত পণ্য পরিবহন করা পিকআপের চালক জনি মিয়া।
তিনি বলেন, “খোদার তিরিশ দিন এইখানে জ্যাম থাকে। কয়েকটা জায়গায় পুলিশ ঠিকমতো দাঁড়ায়ে থাকলেই কিন্তু জ্যাম বেশিক্ষণ থাকে না। অথচ পুলিশ থাকে তাগো ধান্দা লইয়া।”
সোমবার দুপুর ২টার দিকে তার সঙ্গে কথা বলার সময়ই গুরুত্বপূর্ণ তারাব বিশ্বরোডের মোড়ে কোনো পুলিশের উপস্থিতি না থাকার বিষয়টিও নজরে আনেন তিনি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রায় ছয় লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সম্ভাবনা কম থাকলেও মহাসড়কটির সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া, লাঙ্গলবন্দ, মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
এই স্থানগুলোতে যানজটের কারণ হিসেবে সড়কের উপর গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা, টোল আদায়ে ধীরগতি, ধীরগতির ছোট যানবাহনের অবাধ চলাচল ও অবৈধ স্ট্যান্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবার যানজটের শঙ্কা কম। তবে, এক লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটিতে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এ মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ঈদযাত্রায় যানজট কমাতে ঈদের আগে ও পরে সাত দিন মহাসড়কগুলোতে জরুরি সেবা ব্যতীত পণ্যবাহী যান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
একই সঙ্গে ডাকাত ও ছিনতাইপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ এরই মধ্যে মোতায়েন রয়েছে। যেসব স্পট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোতে ফিক্সড পেট্রোল থাকবে।”