Published : 29 Jun 2025, 10:26 PM
এনবিআর কর্মীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন‘ কর্মসূচির কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী কোনো কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে ঢোকেনি, আমদানি পণ্যের কোনো কনটেইনারও ছাড় হয়নি।
খালাস না হওয়ায় ইয়ার্ডে কন্টেইনারের স্তুপ বড় হচ্ছে। সবমিলিয়ে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামানো হলেও কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে না থাকায় সেসব খালাস করা যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে) হলেও ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার জমে থাকাকে বন্দর সংশ্লিষ্টরা স্বাভাবিক হিসবে ধরে নেন।
রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব অনুযায়ী জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৭২২ টিইইউএস, শনিবারে এ সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৮৬২ টিইইউএস।
এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ নানা দাবিতে শনিবার সকাল থেকে সংস্থাটির কর্মীরা সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টমসেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ থেকে বিরত থাকেন। এতে পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
যদিও রোববার রাতে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার বন্দরে রপ্তানি পণ্যের কোনো কনটেইনার প্রবেশ করেনি। আমদানি কন্টেইনারও খালাস হয়নি। জাহাজ থেকে কনটেইনার নামলেও সংখ্যায় খুব কম ছিল।
বন্দরে জমে থাকা কন্টেইনারের পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বন্দরে স্থবিরতার কারণে জেটিতে আসা জাহাজের অবস্থানকাল বাড়ছে এবং কনটেইনার নিয়ে আসা জাহাজের সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানা গেছে। রোববারে বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা কন্টেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা ২০টি ছিল বলে জানান বন্দর সচিব।
বন্দরে প্রবেশ করতে না পারা রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের। তারা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য জাহাজে তুলতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে দাবি করছেন।
চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে পোশাক শিল্প মালিকদের কনটেইনার জমছে। সাধারণত তৈরি পোশাক কারখানা থেকে পণ্য বেসরকারি ডিপোতে আনা হয়। এরপর সেসব কনটেইনার বোঝাই করার পর জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।
কাস্টমসের কর্মীরা কাজ না করায় বেসরকারি ডিপো থেকে এসব কনটেইনার বন্দরে যেতে পারছে না।
বিকডা মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শাটডাউনের কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। আবার আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ডিপোতে আনা যাচ্ছে না।
বিভিন্ন ডিপোর বাইরে রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি পড়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, প্রতিদিন ডিপোগুলো থেকে গড়ে ২২০০ টিইইউস কন্টেইনার বন্দরে জাহাজীকরণের জন্য যায়। কিন্তু রোববারে একটি বিকডা বন্দরে পাঠানো যায়নি।
শুধু ১৭৫০টি খালি বিকডা বন্দরে গেছে এবং ১৪৩৫টি খালি বিকডা বন্দর থেকে ডিপোতে এসেছে।
বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এনবিআর কর্মীদের শাটডাউন কর্মসূচি খারাপ নজির তৈরি করেছে। দেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে এ ধরনের আন্দোলন কখনো মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “ব্যবসা-বাণিজ্য প্রচণ্ড খারাপ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণে মাশুল গুণতে হবে।”