Published : 29 Jun 2023, 10:54 PM
ঈদের বাজারে বগুড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্রয়মূল্যেও চামড়া বিক্রি করতে না পারার অভিযোগ করেছেন। সকালে দাম মোটামুটি থাকলেও দুপুরের পর তাও পাওয়া যায়নি বলে তাদের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত গরুর বড় চামড়া ৪শ-৫শ টাকা এবং খাসির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হয়। আর গ্রামাঞ্চলে গরুর চামড়া ১০০-২০০ টাকা বিক্রি হলেও খাসি-ভেড়ার চামড়া কেউ কিনছে না। ফলে অনেকেই চামড়া ফেলে দেয়।
দুপুর পর্যন্ত অনেকের বাড়িতে চামড়া পড়েছিল; কোনো ক্রেতা যায়নি। যারা চামড়া বিক্রি করতে বের হয়েছেন, তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বাজারের চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কম দিচ্ছেন। এতে তাদের আসল টাকাও তুলতে পারবেন না।
তবে চামড়া ব্যসায়ীরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে ফরিয়া ব্যবসায়ীরা ‘হয়তো’ বাড়তি লাভের আশায় কিংবা ভালো মানের চামড়ার সাথে খারাপ মানের চামড়ার গড় করতে কম দামে চামড়া কিনছেন।
বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বেলা ১২টার দিকে গরুর যে চামড়া ৭০০ টাকায় কিনতে চেয়েছিল, দুপুরের পর তার দাম ৫০০ টাকার উপরে যায়নি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমেছে।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছর বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিনে তাদের লোকসান হয়েছে। এ কারণে এবার তারা চিন্তাভাবনা করে চামড়া কিনছেন।
বেলা ১১টার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা তাদের লোকজন নিয়ে চামড়া কিনতে বসেন। শহরতলী ও গ্রামাঞ্চল থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা সেসব দোকানে চামড়া বিক্রি করতে আসেন।
এবার সরেজমিনে দেখা যায়, এসব দোকানে বেলা দেড়টা পর্যন্ত তেমন কোনো চামড়া আসেনি। যে দুচারজন বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান ও ভটভটিযোগে চামড়া এনেছেন তাদের সেই পরিবহন আটকিয়ে আড়তদারের লোকজন যে দাম বলে তাতে আসল টাকাই উঠবে না ফরিয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান এলাকা থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা রশিদুল হক নামের এক মৌসুমী ব্যবসায়ীর ভটভটি থানা মোড় এলাকায় আটকিয়ে দরদাম করেন ব্যবসায়ীদের লোকজন।
রশিদুল হক বলেন, “পুরো বাজারের ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে দাম কম দিচ্ছে। আমার মতো মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাও তুলতে পারবে না।”
থানা মোড়ে চামড়া কিনতে বসা চামড়া ব্যবসায়ী জসমত উল্লাহ বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবার লবণের দাম বেশি, এছাড়া আড়ত থেকে নগদ টাকা পাওয়া যায়নি। এ কারণে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না।”
শহরের লতিফপুরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক রকেট হোসেন জানান, তাদের এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরু কোরবানির পর থেকে চামড়া দীর্ঘ সময় বাড়িতে পড়েছিল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একজন ক্রেতাকে ডেকে এনে মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।
বগুড়ার মহাস্থান থেকে শহরে চামড়া বিক্রি করতে আসা আকাশ রহমান জানান, গ্রামে যে দামে চামড়া কিনেছেন শহরে আসার পর তার থেকেও দাম কম বলা হচ্ছে। ছাগলের চামড়া ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, গরুর চামড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার উপরে দাম বলে না। ভেড়া ও খাসির চামড়া ফ্রী দিলেও কেউ নিচ্ছে না।
শহরতলীর আকাশতারার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্রেতা না পেলে কোনো এতিমখানায় চামড়া পাঠিয়ে দিতে হবে।
ধুনটের গোসাইবাড়ী সাতমাথায় চামড়া কেনা-বেচা হয় প্রতি বছর। এবার সেখানে খাসি ও ভেড়ার চামড়া নেওয়া হচ্ছে না। তাই বিক্রেতারা ফেলে দিচ্ছে। গরুর চামড়ার কোনো মাপ নেই – ১০০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ওই এলাকার ফড়িয়া ব্যাবসায়ী ভুট্টো বলেন, “বিভিন্ন বাড়ি থেকে দশটি চামড়া কিনেছি, গড়ে ৬ শত টাকা পড়েছে। আর প্রতিটি বিক্রি করলাম ১৫০ টাকা করে; তাও নিতে চায় না।”
ওই গ্রামের শরন তালুকদার বলেন, “খাসির চামড়া না নেওয়ায় ফেলে দিয়েছি।”
ধুনটের চামড়া ব্যাবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, “১০০ থেকে ২০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনছি, ভেড়া ও খাসির চামড়া কিনছি না।”
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যবসায়ীদের আড়তে এখনও চামড়া কেনা শুরু হয়নি। মাঠ পর্যায়ে ফরিয়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছে।
“তারা হয়তো বাড়তি লাভের আশায়, কিংবা ভালো মানের চামড়ার সাথে খারাপ মানেরগুলো মিশিয়ে গড় করতে কম দামে চামড়া কিনছে।”
তবে আড়তে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া কেনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে ভালো মানের চামড়ার দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হওয়ার কথা।
তিনি আরও বলেন, নগদ টাকার সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিচ্ছে না। এ কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নিজ দায়িত্বে চামড়া কিনছে। তারা বিক্রি করতে না পারলে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করবে।