Published : 11 Feb 2025, 09:06 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের রেলগেইট মোড়ে রাস্তা বন্ধ করে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থগিত হওয়া কমিটির নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ায় চালক ও যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন।
কর্মসূচি চলাকালে স্থগিত কমিটির সিনিয়র মুখ্য সংগঠক যুবায়ের আল ইসলাম সেজান বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটি সিরাজগঞ্জ জেলায় চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত একটি কমিটি দিয়েছিল। কিন্তু কিছু চাঁদাবাজ প্রকৃতির ব্যক্তি যমুনা সেতুর সামনে ব্লকেড করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্র করায় কেন্দ্রীয় কমিটি সিরাজগঞ্জ জেলায় সম্প্রতি ঘোষিত কমিটি স্থগিত করেছে। আমরা সেই কমিটি বহাল চাই।”
তিনি বলেন, “সিরাজগঞ্জের কমিটি ঘোষণার পর যমুনা টিভির সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা রুবেল আমাদের কোনো কথা না শুনে, শুধু একপক্ষের বক্তব্য নিয়ে চাঁদাবাজদের পক্ষ হয়ে যমুনা টিভিতে সংবাদ পরিবেশন করেছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত আখ্যা দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এটা হলুদ সাংবাদিকতা, এজন্য তারও বিচার দাবি করছি।”
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিরাজগঞ্জ জেলার স্থগিত কমিটির আহ্বায়ক সজিব সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক আসির ইন্তেসার অয়ন, মুখপাত্র টি এম মুশফিক সাদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা রুবেল বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জের আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত হওয়ার পর পদ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমি মাইকে বক্তব্য দিয়েছি। বক্তব্যে বলেছি, সিরাজগঞ্জ জেলায় বৈষম্যহীনভাবে বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে যেন সবাইকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় সুন্দর একটি কমিটি করা হয় সে দাবিও জানিয়েছি।”
অপরদিকে, একই দাবিতে কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে রেললাইনের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন ম্লোগান দেন তারা। এ সময় স্টেশনের দুই প্রান্তে কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কামারখন্দ উপজেলার সমন্বয়ক এস এম মুহিত হাসান বলেন, স্থগিত হওয়া কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনের ইনচার্জ মো. আবু হান্নান বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উত্তরাঞ্চল ও ঢাকার মধ্যে সব ট্রেন বন্ধ ছিল। এ সময় উল্লাপাড়া স্টেশনে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ এবং সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ আটকা পড়েছিল। ছাত্ররা সরে যাওয়ার পর পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়।”
শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে ২৮৪ সদস্য বিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
এরপর থেকে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাংশের শিক্ষার্থীরা।
এর অংশ হিসেবে সোমবার বিকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল তারা।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত এক নোটিশে জেলা কমিটি স্থগিত করা হয়। কমিটি স্থগিতের পর পর রাত ৯টার দিকে শহরে আনন্দ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থগিত কমিটির শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন-
সিরাজগঞ্জে এবার কমিটি বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের
আন্দোলনের মুখে বৈষম্যবিরোধীদের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি স্থগিত
বৈষম্যবিরোধী কমিটি নিয়ে বিক্ষোভে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচল বন্ধ