Published : 04 Feb 2025, 06:41 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। পরে মিছিলটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং আবাসিক হল ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন তারা।
সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরের সবাইকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
এ সময় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূইয়া বলেন, “আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কারোরই পোষ্য কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
“অজপাড়া গাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরে পড়াশোনা করতে পারে, তাহলে একজন শিক্ষার্থী যে জাহাঙ্গীরনগরের ছোট থেকে বড় হয়েছে, ভালো স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে তার কোনো ধরনের প্রিভিলেজ লাগবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।”
তিনি বলেন, “কোটা একটা প্রিভিলেজ, এটি কোনো অধিকার না। এই প্রিভিলেজটা ততক্ষণ পর্যন্ত দেওয়া হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দরকার। কিন্তু এটা কোনোভাবেই দরকার না। আজ আমরা এই পোষ্য কোটা চিরতরে বাতিল করার জন্য আন্দোলনে নেমেছি।”
আইন ও বিচার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাওছার আলম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের যৌক্তিক দাবি উঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এরই ধারাবাহিকতায় পোষ্য কোটা বাতিল নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করি। এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ আমরণ অনশনে বসে।
“উপাচার্যের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অনশন থেকে সরে আসে। তারপরও দেখা গেছে আজকে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের দাবির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এ জন্য আজকে সংস্কারের দাবি না দিয়ে বাতিলের দাবি নিয়ে এসেছি।”
এর আগে সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সংস্কারের আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
সেই আশ্বাসের ভিত্তিতে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিকে পোষ্য কোটার জন্য আগে যে সুযোগ-সুবিধা ছিল সেগুলো পুনর্বহালের জন্য প্রতিবাদ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি এবং কর্মচারী ইউনিয়ন।
একই সঙ্গে পোষ্য কোটার জন্য আগের সব সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে আগামীকাল থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ জাবির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান বাবুল।
তিনি বলেন, “পোষ্য কোটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধাকে ব্যাহত করে না। পোষ্য কোটা একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা, যেটা ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই এই সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এটা আমাদের অধিকার।
“পোষ্য কোটার জন্য নতুন যে নিয়ম করা হয়েছে সেগুলো বাতিল করে পূর্বের সব সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহালের জন্য আমরা সকালে প্রতিবাদ মিছিল করেছি। আগামীকাল থেকে যত দিন পর্যন্ত পূর্বের সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহাল করা না হবে তত দিন পর্যন্ত আমাদের লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।”
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান চলাকালে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।
তখন তিনি বলেন, “আমি একাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এজন্য আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
শিক্ষার্থীরা এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এখনও অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন:
জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আবারও অনশনে শিক্ষার্থীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন স্থগিত
জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আবারও অনশনে শিক্ষার্থীরা