Published : 02 Jun 2025, 10:32 PM
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা সীমান্ত এলাকার ১৯ গ্রাম তলিয়েছে; এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৪৫০ পরিবারের অন্তত দুই হাজার বাসিন্দা।
তবে টানা ভারি বৃষ্টি ও ঢলে আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারকদের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেলেও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে তিন গাড়িতে ১৫ টন মাছ ভারতে গেছে। এ ছাড়া স্থলবন্দরের ব্যবসা কার্যক্রম ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।
শনিবার রাত থেকে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে শুরু করে। সেইসঙ্গে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে আখাউড়ার বিভিন্ন নদী, খাল ও বিলে পানি বেড়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কালন্দি খাল, কালিকাপুর হয়ে আবদুল্লাপুর দিয়ে জাজি গাঙ, বাউতলা দিয়ে মরা গাঙ ও মোগড়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদী দিয়ে পানি আসছে। এতে উপজেলার দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নের গ্রামের ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও কিছু বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারের জন্য ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার আবদুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩টি পরিবারের অন্তত ৫০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাত থেকে রোববার রাত ৩টা পর্যন্ত একটানা উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর বীরচন্দ্রপুর, আব্দুল্লাহপুর, কেন্দুয়ায়, বঙ্গেরচর মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা, উমেদপুর, সেনারবাদী, জয়নগর, কলাপাড়া, রাজেন্দ্রপুর, আওড়ার চর, ছয়গরিয়া, মনিয়ন্দা ইউনিয়নের ইটনা, আইড়ল, টনকি, তুলাইশিমুল, শোনলহগর, নতুনপাড়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এসব গ্রামের কিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি সামান্য কমেছে। তবে ৯টার পর বৃষ্টি শুরু হলে পানি বাড়তে শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগরতলা-আখাউড়া আন্তর্জাতিক সড়কের উপজেলার বঙ্গেরচরের অংশ, কালিকাপুর, জাজিরা সেতু থেকে উমেদপুর সড়ক, গাজীরবাজার থেকে আওড়ার সড়কের কেন্দুয়ায় মেলার মাঠের অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত ব্যবসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে পানি বাড়লে ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা রয়েছে।
আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার বলেন, সোমবার বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী পারাপার হয়েছেন। সকালের পর থেকে ইমিগ্রেশন ভবনের সামনের অংশে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান বলেন, আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর ভারত সীমান্তে সকাল ৯টায় পানির সমতল ছিল ১২ দশমিক ১২ মিটার। স্থানটির বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার।
অর্থাৎ বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে; যা আগের দিন একই সময় পানির সমতল ১১ দশমিক ৫৮ মিটার ছিল বলে জানান তিনি।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। তবে হাওড়া নদীর বাঁধ অক্ষত আছে। এ ছাড়া পানিবন্দি ৪৫০ পরিবারের মধ্যে ১৩টি পরিবারের ৫০ সদস্য একটি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।