Published : 07 Dec 2023, 10:02 PM
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লিফট অপারেটর’ পদের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ১৭ প্রার্থীকে আটক রাখার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
ঘটনার শিকার চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার পরীক্ষা দিতে আসার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরীক্ষা শেষে হলে কক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বজনরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক সংগ্রহ করতে গেলে সেটিও ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঘটনার শিকার চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট অপারেটর পদের চাকরি পরীক্ষা হয়েছে। ১১টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ২১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
ঘটনার শিকার সোহান হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সাথে সাথে কয়েকজন আমাকে ডাকে। ডেকে নিয়ে বলে, ‘পরীক্ষা দিতে এসেছেন?’
“এরপর আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে একজন বলে, ‘তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, অ্যাডমিট কার্ড কোথায় থেকে পাইলি?”
সোহান বলেন, “ওই কক্ষে আমিসহ ছয়জন চাকরি পরীক্ষার্থী ছিলাম। এছাড়াও হলের ৩০৪ নম্বর কক্ষ ও পাঁচ তলার একাধিক রুমে আমরাসহ প্রায় ১৭ জনের মতো আটক ছিলাম।”
তার অভিযোগ, “৩০৯ নম্বর রুমে চিৎকার দিলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারা হয়। আমার চেয়ে রুমের অন্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি মারধর করা হয়েছে। পরে সাড়ে ৩টার দিকে ওরাই শহরের পালবাড়ি নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়।”
কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা হামজা রহমান নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, “সাড়ে ৯টার দিকে ভাড়ায় চালিত একটি মোটরসাইকেল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসি। নামার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমাকে ডাকল। এরপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার লিফট চালানার অভিজ্ঞা রয়েছে?’ তার পর ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে যায় আমাকে। কক্ষে ঢুকিয়ে আমাকে আটকে রাখা হয়। ফোন-কাগজপত্র সব ছিনিয়ে নেয়।”
তিনি বলেন, “চাকরি পরীক্ষা দেওয়ার অনুরোধ করে আকুতি জানালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একজন আমাকে বলেন, ‘তোর চাকরি বড়, নাকি জীবন বড়’।”
ভুক্তভোগী এক প্রার্থীর অভিভাবক বলেন, “সকালে আমার জামাই আরিফুল ইসলামকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে আমার জামাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘক্ষণ তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরে আমি উপাচার্য স্যারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, “ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই অপহরণের সাথে জড়িত নন। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সাথে জড়িত ছিল না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেন তবে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই; পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হন, তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয় প্রশাসনিকভাবে।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “লিফট অপারেটর পদের চাকরি পরীক্ষা ছিল। সাড়ে ১২টার দিকে আমি জানতে পারলাম, কিছু পরীক্ষার্থীকে ছাত্রবাসে আটকে রাখা হয়েছে। পরে প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই কিন্তু প্রভোস্ট আমাকে জানান, ছাত্রাবাসে কাউকে পাওয়া যায়নি।
“দুপুরের পরে ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আমার সঙ্গে দেখা করেন। তারা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি।”
“পরে বিকালের দিকে এ ঘটনার জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগের কিছু ছেলে ক্যামেরার হার্ডডিক্স ছিনিয়ে নেয়,” বলেন উপাচার্য।
ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে উপাচার্য বলেন, “আগামী শনিবার রিজেন্ট বোর্ডে সভা ডাকা হবে; সেখানে এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলাও করা হবে।”