Published : 30 Jan 2025, 09:34 PM
পরিপূর্ণ ইজতেমা ময়দান আর খিত্তায় খিত্তায় ধর্মপ্রাণ মানুষের সুশৃঙ্খলা অবস্থানের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর শুরু হয়েছে আমবয়ান; যা সারারাত ধরে চলবে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে।
ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা সাহেবের আমবয়ানের মাধ্যমে জুবায়েরপন্থিদের ইজতেমার পর্ব শুরু হল। এই বয়ানের তরজমা করছেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের।
তবে মূল বয়ান শুরু হবে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর। তখন বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক।
এসব তথ্য জানিয়ে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়ক শুরায়ী নেজাম হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, এরপর সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। আর এদিন দুপুরে জুমার নামাজে ইমামতি করবেন মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের।
ইজতেমা ময়দানের আয়োজক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ জানান, ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১০ থেকে ২০ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছে আয়োজক কমিটি।
দেশ-বিদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত তাবলিগ জামাতের বৃহৎ এই বার্ষিক সমাবেশ নানা শঙ্কার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ (মিরপুর, কাকরাইল, ডেমরা, দোহার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ) মোট ৪১টি জেলার অনুসারীরা অংশগ্রহণ করছে।
সেগুলো হচ্ছে- গাজীপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোণা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলা।
দ্বিতীয় ধাপে (৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি) অংশগ্রহণ করবেন অন্য জেলার তাবলীগের সাথীরা। যা এবারই প্রথম।
আর ১৪, ১৫ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি সাদপন্থিদের ইজতেমা করার দিনক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর রাতে টঙ্গীর তুরাগ তীরের ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারিদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর বিশ্ব ইজতেমার ৫৮ তম আসর নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দেয়। এই ঘটনার পর দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করে।
ইজতেমার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন থেকে যা যা করণীয় তা সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম পর্বে জুবায়েরপন্থিদের আর দ্বিতীয় ধাপে সাদপন্থিদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। সাদপন্থিদের ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আগতদের পানি সরবরাহ, টয়লেট, পয়ঃনিষ্কাশন, রাস্তা নির্মাণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান বিভাগীয় কমিশনার।
৯ হাজার পাকা টয়লেটের ব্যবস্থা
এ ব্যাপারে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজোয়ান হোসেন বলেন, এবার ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ৯ হাজার পাকা টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের খাবার পানি, ওজু, গোসলের সুবিধার্থে টিউবওয়েল সংস্কার, স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এর মধ্যেই ময়দানের চারপাশের স্থাপিত বহুতল শৌচাগার ও পানি সরবরাহের লাইনগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও মেরামত করা হয়েছে।
বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা
বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে স্টেশন রোডসহ ময়দানের চারপাশে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্ধশত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
টঙ্গী ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আফজাল হোসেন বলেন, টঙ্গী হাসপাতালকে ইজতেমার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও একটি হৃদরোগ ইউনিট, একটি বক্ষব্যাধি ইউনিট, অ্যাজমা ইউনিট, ট্রমা ইউনিট, অর্থোপেডিক ইউনিট ও বার্ন ইউনিট, ১৫টি স্যানিটেশন টিম এবং ২৫টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
১৪ বিশেষ ট্রেন
যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমা চলাকালীন ১৪টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর ফায়ার সার্ভিস বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের অগ্নিনিরাপত্তা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
তাবলিগ জামাতে আগতদের নিরাপত্তা দিতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন।
এই কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমে বলেন, কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকবে পুরো ইজতেমা মাঠজুড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য নিরাপত্তা নজরদারি করবে। ওয়াচ টাওয়ারে পর্যবেক্ষণ ছাড়াও পুরো ময়দান ও আশপাশ এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে।
এদিকে র্যাব এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সদর দপ্তর, র্যাব-১সহ ঢাকার পাঁচটি ব্যাটালিয়ন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারী ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
র্যাবের স্পেশাল টিম, বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিশ্ব ইজতেমা: শুরুর আগেই পরিপূর্ণ তুরাগ তীরের ময়দান
নিরাপত্তার স্বার্থেই ইজতেমার ২ পর্বের মধ্যে সময় বাড়ানো হয়েছে: আইজিপি
তুরাগ তীর ছেয়ে গেছে সামিয়ানায়, চলছে ইজতেমার জোর প্রস্তুতি
টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ: হাসপাতালে আরেকজনের মৃত্যু
তুরাগ তীর ছেয়ে গেছে সামিয়ানায়, চলছে ইজতেমার জোর প্রস্তুতি