Published : 10 Nov 2024, 09:14 PM
মানবেন্দ্র নায়ারণ লারমার শুধুমাত্র পাহাড়িদের কথা বলেননি; তিনি দেশের সব মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন। তিনি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নায়ারণ লারমার ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার খাগড়াছড়িতে এক স্মরণ সভায় এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা।
এর আগে সকালে শহরের ‘চেঙ্গী স্কয়ারে’ এম এন লারমার ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীরা।
পরে শহরের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত স্মরণ সভার জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংশুমান চাকমা বলেন, “স্বাধীনতার ৫৩ বছর হতে চলেছে। দেশের মানুষ তথা জুম্মদের এখনও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি আসেনি।
“তৎকালীন সময় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তার ভাষণে নিপীড়িত, নির্যাতিত ও শোষিত বঞ্চিত জুম্ম জনগণের বাঁচার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য নিজস্ব আইন পরিষদ সম্বলিত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় সেদিন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতিও চেয়েছিলেন।”
১৯৭২ সালের সংবিধান বিতর্কে এম এন লারমা শুধু পাহাড়িদের কথা বলেননি বরং দেশের সব মেহনতি মানুষের মুক্তির কথা বলেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের প্রধান জুপিটার চাকমা।
তিনি বলেন, “এম এন লারমা শোষণহীন, বঞ্চণাহীন সমাজের কথা বলেছেন। তিনি কোনো নির্দিষ্ট জাতির নেতা নন, তিনি ছিলেন জাতীয় নেতা। আমরা একটি ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। একটি বড় রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদী ক্ষমতাকে পরাভূত করে রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ পেয়েছি, যেখানে ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে অংশীদারিত্ব রাখতে হবে।
“তরুণ প্রজন্ম প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গঠনে হাত দিয়েছে, সেখানে মহান নেতার উত্থাপিত দাবি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত না করলে, সেই বৈষম্যহীন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে না।”
স্মরণ সভায় ইউপিডিএফয়ের (গণতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমর জ্যোতি চাকমা, শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা (বকুল), সমাজ সেবক রবি শংকর চাকমা, প্রিয় কুমার চাকমা এবং ধীমান খীসা বক্তব্য দেন।
বক্তাদের অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এখনো নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনা তারই প্রমাণ। সবাইকে ষড়যন্ত্র নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।
১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর ভোরে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ভিন্ন মতাবলম্বীদের অতর্কিত হামলায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ আটজন নিহত হন।