Published : 07 Jan 2024, 02:05 PM
ক্যাপশন: সোনাগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ১নং বুথে লাঙ্গল প্রতীকে সিল মারা ব্যালট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফেনী-৩ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে মহাজোট সমর্থিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এমন অভিযোগে সোনাগাজী উপজেলার একটি ভোটকেন্দ্রের ভোট গ্রহণ দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল; আরেকটি ভোটকেন্দ্রে সিল মারা ২৫টি ব্যালট জব্দ ও পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়েছে।
এছাড়াও সকাল থেকে কয়েকটি কেন্দ্রের আশেপাশে মুহুর্মুহু হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
এই আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহের অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে সরকার দলীয় কর্মীরা মহাজোটের প্রার্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর লাঙলের পক্ষে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরছেন।
সোনাগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ১নং বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার খোরশেদ আলম জানান, রোববার দুপুর ১২টার দিকে ৩০-৪০ জন যুবক তার রুমে ঢুকে ব্যালট বই ছিনিয়ে নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে সিল মারতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্রে উপস্থিত হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ সময় ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুজ জোহরা মুনা ওই বুথ থেকে লাঙল প্রতীকে সিল মারা ২৫টি ব্যালট বাতিল করেন এবং বুথে থাকা লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্ট মাইন উদ্দিনকে আটকের নির্দেশ দেন।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তূর্য সাহা জানান, এই কেন্দ্রে পুরুষ ও নারী ভোটার মিলিয়ে ৩ হাজার ৫১৬ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩৮০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
কেন্দ্রের আশেপাশে ভোট শুরুর পর থেকে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোনাগাজীর ওলামাবাজার হাজী সেকান্তর মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শ্রী পদ বিশ্বাস বলেন, তার কেন্দ্রে মহিলা ভোটারের কক্ষে ১৫-২০ জন যুবক প্রবেশ করে লাঙ্গল প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে তিনি দুই ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখেন। দুর্বৃত্তরা ২০০টির বেশি ব্যালটে লাঙ্গলের সিল মেরে বক্সে ঢুকিয়েছেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
খবর পেয়ে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমার-তুজ জোহরা মুনা কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছেন।
ফেনী-৩ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী রহিম উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, “ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে সোনাগাজী উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে জাল ভোটের মহোৎসব চলছে। এই উপজেলায় এক পারসেন্ট ভোটও সুস্থ হচ্ছে না।”
ভোটের ফলাফল নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সকাল থেকে সোনাগাজীর প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে লাঙ্গলের পক্ষে জাল ভোট দিচ্ছেন।”
তবে অভিযোগের বিষয়ে ফেনী-৩ আসনের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ তার দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছেন। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ প্রার্থী।