Published : 04 Jun 2025, 07:17 PM
কোরবানির ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ১০ দিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকছে।
তবে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বিকালের পর থেকেই মূলত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমদানি-রপ্তানি। কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তারা ঈদের ছুটিতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটাতে দেশের বাড়ির পথে রওয়ানা দেবেন বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক আদেশে ঈদের দিন বাদে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে ৫ থেকে ১৪ জুন টানা ১০ দিন ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিসহ কাস্টমস ও বন্দরের কাজকর্ম বন্ধ থাকবে।
১৫ জুন থেকে পেট্রাপোল ও বেনাপোল দুই বন্দরের মধ্যে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি চালু হবে। এদিন ছুটি শেষে কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম সচল হবে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে।
১৫ জুন সকাল থেকে আগের মত এ পথে আমদানি-রপ্তানিসহ কাস্টমস হাউজ ও বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম চলবে। তবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক আদেশে জানিয়েছে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার অভিপ্রায়ে ঈদ উপলক্ষে ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত (ঈদের দিন ছাড়া) সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটিতেও খোলা থাকবে সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন।
তবে এই আদেশ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীসহ ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল বন্দর ও শুল্ক ভবন কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, এ সময় কেউ চাইলে অবশ্যই পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ঈদের আগে-পরে ছয় দিন পণ্য পরিবহনের ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। ছুটিতে ব্যবসায়ী ও দোকান শ্রমিকরা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যায়। দোকানপাট বন্ধ থাকে। তারা এ সময় কোনো পণ্য ডেলিভারি সাধারণত নেয় না।
বন্দর ব্যবহারকারী সূত্রে জানা যায়, দেশে চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব আদায় হয় বেনাপোল স্থলবন্দরে। স্থল পথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে থাকে। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকারের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে।
এমনিতেই বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট লেগেই আছে। একটানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর আমদানি-রপ্তানি চালু হলে সৃষ্টি হবে আরও পণ্যজটের। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দরে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা দিন-রাতে বন্দর এলাকায় টহল দেবেন। পাশাপাশি বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ঈদের ছুটির মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য খালাস নিতে চাইলে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি রাসেল মিয়া বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দর এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ও দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিশেষ নজরদারি নেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি ইব্রাহিম আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক থাকবে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত। এ সময় একটু বেশি ভিড় হয়ে থাকে। সে কারণে ইমিগ্রেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
এদিকে সীমান্তের দুই পাশে টানা ছুটির কারণে ট্রাকের জট বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের পেট্রাপোলে পণ্যবাহী ট্রাকের জট রয়েছে বলে জানান এ বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কার্ত্তিক চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, “বন্দরে কয়েকশ পণ্য বোঝাই ট্রাক অপেক্ষা করছে। এসব পণ্য পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল বন্দরে ঢুকবে ছুটি শেষে। এতে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে।”