Published : 30 May 2025, 11:32 AM
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাট পৌর শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে একটি হরিণের।
বাগেরহাট কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোতাহার হোসেন বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় বাগেরহাট জেলায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি এই বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাট পৌরসভার বাসাবাটি, শিশু হাসপাতালের মোড়, খারদ্বার, সাহাপাড়া, রাহাতের মোড়, থানার মোড়, কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, পুরাতন বাজার, দাসপাড়ার মোড়, রেলরোড ও পোস্ট অফিস এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষদের।
পৌরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ- বর্ষা মৌসুম আসলেই পৌরবাসীর দুর্ভোগের শেষ থাকে না। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌর এলাকা প্লাবিত হয়। তারা এই সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
বাগেরহাট শহরের শিশু হাসপাতালের মোড়ের বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় টানা বৃষ্টি হলেই পানি ঘরের মধ্যে উঠে যায়। তাতে রান্না-খাওয়া বন্ধের উপক্রম হয়। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই সমস্যার মধ্যে আছি। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ির উঠানে-রাস্তায় পানি জমে থাকে।
এছাড়া নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মংলা ও রামপাল উপজেলার নিম্নাঞ্চলও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত দুইদিনে জোয়ারের পানিতে অন্তত চারবার সুন্দরবনের বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরবনের দুবলারচর, আলোরকোল, কোকিলমনি, শেলারচরসহ বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকা সবচেয়ে বেশি পানিতে প্লাবিত হয়।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ডুবে একটি হরিণের মৃত্যু হয়েছে। বনের ভেতর থেকে ভেসে আসা অপর একটি হরিণ শাবক উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।
“নিম্নচাপের প্রভাবে গত দুদিনের জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট বেশি। এই কারণে বনের প্রাণিকূলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া বনের ভেতরে বন্যপ্রাণির মিষ্টি পানির আধার বেশকিছু পুকুর জোয়ারের লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে তা পানের অযোগ্য পড়েছে বলে জানান তিনি।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, জোয়ারের পানিতে বন্যপ্রাণিকূল যাতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য বনে বেশকিছু মাটির উঁচু ডিবি তৈরি করা আছে তারা সেসব ডিবিতে আশ্রয় নেয়ায় বন্যপ্রাণির বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাট পৌরসভাসহ জেলার বেশকিছু নিচু এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি আরও বলেন, “বাগেরহাট পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে। এটি শেষ হলে আগামীতে জলাবদ্ধতা অনেকটাই নিরসন হবে।”