Published : 09 May 2025, 10:44 PM
সেবার মূল্য বাড়িয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এতে অন্যান্য সেবামূল্যের সঙ্গে বেকারত্ব সনদের জন্যও গুনতে হবে বাড়তি টাকা। আগে যেখানে বেকারত্ব সনদ পেতে দিতে হত ২০ টাকা এখন সেখানে ৮০ টাকা বেশি গুনতে হবে।
সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মামুনের সই করা নাগরিক সেবা ও সেবামূল্য তালিকা থেকে এসব বিষয় জানা গেছে।
তালিকায় অন্য যেসব সেবার কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলোতেও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিটি করপোরেশনের এমন ঘোষণার পর সমালোচনা চলছে নগরজুড়ে।
সেবামূল্য তালিকার ক্রমিক নম্বর ১৬ তে উল্লেখ করা হয়েছে, বেকারত্ব সনদ নিতে আগে ২০ টাকা দিতে হত। এখন লাগবে ১০০ টাকা।
এছাড়া নাগরিক সনদ বাংলা ও ইংরেজিতে নিতে আগে ২০ টাকা দিতে হত, এখন লাগবে ১০০ টাকা।
চারিত্রিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, বিবাহিত/অবিবাহিত সনদ, মাসিক/বার্ষিক আয় প্রত্যয়ন, স্থায়ী বাসিন্দা, ভূমিহীন, একই নামের প্রত্যয়ন, বিবিধ প্রত্যয়ন, বাংলা-ইংরেজি প্রত্যয়ন, পারিবারিক সনদপত্র, মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র, ক্ষমতাপত্র, অনাপত্তিপত্র, পি-ফরম (পৌর কর আপত্তি) আগে ছিল ২০ টাকা। নতুন প্রদত্ত নাগরিক সেবা ও সেবামূল্যর তালিকায় তা ১০০ টাকা করা হয়েছে।
তবে জন্ম ও মৃত্যু সনদ আগে ছিল ৫০ টাকা; নতুন আদেশেও একই রাখা হয়েছে।
বয়স সংশোধন আগে ছিল ৫০ টাকা, নতুন তালিকাতেও ৫০ টাকাই রাখা হয়েছে।
নতুন এই সেবামূল্য তালিকা চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
জানতে পেরে নগরবাসী বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছেন।
নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন তার ফেইসবুকের পোস্টে বলেন, “এতিম কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নাগরিকদের সাথে আলাপ না করেই একপেশে সব ধরনের নাগরিক সেবার রেইট বৃদ্ধি করেছে। সেবার মান না বাড়লেও সেবার দাম ৪০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে অমানবিক লাগছে ক্রমিকের ১৬ নম্বর তালিকার বেকারত্ব সনদ নিতে লাগবে ১০০ টাকা! যে বেকার সে আবার টাকা পাবে কোথায়?”
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু তার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে লেখেন, “গণশুনানি ব্যতিরেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কর্তৃক নাগরিক সেবামূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ।
“বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে; এখনো কোনো মেয়র নেই, নেই কোনো নির্বাচিত পরিষদও। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন সেবার মূল্য ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, কোনো রকম গণশুনানি ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে যা অতন্ত অযৌক্তিক ও জনবিরোধী।”
এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়া অত্যাবশ্যক ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
অতএব, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানাই অবিলম্বে এই সেবা মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে পূর্ববর্তী মূল্য বহাল রাখা হোক, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিষয়ে গণশুনানি ও জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।
বিএনপি নেতা ইউসুফ মোল্লা টিপু মোবাইল ফোনে ফেইসবুকে তার এই প্রতিবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিটি করপোরেশনের সেবার মূল্য বাড়ানো নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, “কোনো প্রকার গণশুনানি কিংবা একটি মুক্ত সভার আয়োজন ছাড়াই সিটি করপোরেশন কীভাবে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে?”
এ বিষয়ে জানতে সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ সুমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সাড়া মেলেনি।
সেবার মূল্য বাড়ানোর নিয়ে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. ছামছুল আলম বলেন, “এ বিষয়ে মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
বাংলাদেশের কোথাও ২০ বা ৫০ টাকা দিয়ে সেবা নেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বেকারত্বের সনদ পেতে ১০০ টাকা লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন কয়জন বেকার এসেছে সনদ নিতে?”
পরে তিনি আর কথা বাড়াতে চাননি।