Published : 06 Aug 2024, 08:43 PM
বাগেরহাট সদর উপজেলায় ঘরে ঢুকে সাবেক স্কুল শিক্ষককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই শিক্ষকের স্ত্রী ও মেয়ে।
সোমবার রাতে বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের ছোট পাইকপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।
নিহত মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি (৬৫) ছোট পাইকপাড়া গ্রামের প্রয়াত কেশব লাল চ্যাটার্জির ছেলে। তিনি পার্শ্ববর্তী মধুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
এ সময় আহত তার স্ত্রী শেফালি চ্যাটার্জি (৬০) ও মেয়ে ঝুমা রানী চ্যাটার্জিকে (৩৫) বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে বেশ কিছু নেতাকর্মী ও তাদের বাড়িঘরে। এতে অন্তত ৫৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় কাজ করছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মারধরে আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩১ জন। তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের কর্মী, কয়েকজন বিএনপির কর্মী বলেও দাবি করেন।
তবে জেলার কোথাও সরকারি স্থাপনা, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
জেলায় হামলা ও বিশৃঙ্খলা রোধে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় নেতা, ছাত্রদের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত একাধিক সভা করেছে জেলা পুলিশ।
হামলায় আহত বাগেরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেফালি চ্যাটার্জি বলেন, “ঘর-দরজা সব ভাঙছে, সব কিছু নিয়ে গেছে। কিচ্ছুই নেই। সন্ধ্যার দিকে একদল এসে বাড়িতে ঢিল মারছে। তখনও বুঝিনি, রাত্রিরি আইসে এই ভাঙে মাইরা ফ্যালবো।”
আর্তনাদ করতে করতে তিনি বলেন, “এট্টু জায়গা আছে, ওই জায়গা-জমিই কাল হইছে। এট্টু সম্পদের জন্নি তো, তোরা সব নিয়ে যাতি, মাইরে ফেললি কেন? সব ভাঙে ফেললি।”
আহত মেয়ে ঝুমা রানীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৩০টির বেশি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনিও মায়ের পাশের বিছানাতেই চিকিৎসাধীন।
ঝুমা রানী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ঘরে আমার ছোট ছেলে ও বোন ছিল। তাদের ঘরের পাটাতনের উপর ও খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে বাঁচাইছি। আমাগো কী দোষ? আমরা তো কোনো দল করি না। শুধু শুধু আমাগো ওপর কেন হামলা করলো? আমার বৃদ্ধ বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটায় মেরে ফেলল।”
তিনি বলেন, “প্রতিবেশী হুমায়ুন শেখ ও নুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় নুরুল ইসলাম বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে যায়। রাতে মুখোশ পড়ে এসে আমাদের ওপর হামলা, ভাঙচুর-লুটপাট করে। ঘরের সবকিছু নিয়ে যায় হামলাকারীরা।”
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে হুমায়ুন শেখ ও নুরুল ইসলাম শেখ পলাতক রয়েছেন। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে কচুয়া উপজেলার বাধাল এলাকায় নাজমা সিকদার সেতারা (৫৩) নামের এক নারীকে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষরা। তার বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুসহ সবকিছু নিয়ে গেছে।
নাজমা সিকদার কচুয়ার গোপালপুর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। দুই পায়ে জখম হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজমা সিকদার সেতারা বলেন, “বাড়ির সবকিছু লুট হয়েছে গেছে। বাড়িতে কিচ্ছু নেই। হাঁস-মুরগি, ছাগল যা ছিল সব নিয়ে গেছে।”
তার দাবি, “স্থানীয় নিলু, শহীদ, আছাদ, মাহফুজদের সঙ্গে আমার মামলা ছিল। তা মিটে গেছে। তারপরও আমাকে মারধর করছে।”
তবে চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ তাদের স্থাপনা ছেড়ে কোথাও যাতায়াত করছে না। গেল রাত থেকে কিছু এলাকায় সেনা টহল দেখা গেলেও একটা থমথমে পরিস্থিতি দেখা গেছে।
বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের টহল দিতে দেখা গেছে। কারও কারও হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রও দেখা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের নাগেরবাজার এলাকায় প্রতিরোধ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “অবস্থার বাস্তবতায় পুলিশের মনোবলের সংকট আছে। পরিস্থিতি উত্তরণে সবাই মিলে এগিয়ে যেতে চেষ্টা চলছে।”