Published : 13 Jun 2025, 02:58 PM
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং এতে অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়ন ও বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই দলের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষের পর উপজেলাজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
শুক্রবার সকালে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের স্বাক্ষরিত এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরপরই উপজেলাজুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
১৪৪ ধারা নিয়ে ইউএনওর আদেশে বলা হয়, গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ও বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদ উভয়পক্ষই যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে গলাচিপা থানা কর্তৃপক্ষ ইউএনওকে অবহিত করেছে।
তাই গলাচিপা পৌরসভা ও সংলগ্ন এলাকায় ১৩ জুন সকাল ৮টা থেকে ১৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এই সময়ের মধ্যে জমায়েত, মিছিল, সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল কিংবা দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আদেশ লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শুক্রবার সকালে গলাচিপা থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। এর পর দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের (ভিপি নুর) ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম নুরসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন।
সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের অনুসারীসহ স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা নুরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। নুর তখন উপজেলার বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকার একটি স্মরণসভায় অংশ নিয়ে ফিরছিলেন।
ঘটনার বর্ণনায় চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে তাদের কর্মীসভা চলছিল। এ সময় নুরুল হকের ভাই আমীনুল ইসলাম নুরসহ দুজন এসে ১০ মিনিটের জন্য তাদের আলোচনা বন্ধ করতে বলেন। এ সময় তারা আলোচনা বন্ধও করেন।
“কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই নুরুল হকের ভাই ও তার লোকজন কার্যালয়ে উপস্থিত বিএনপির নেতা-কর্মীদের চেয়ার ছুঁড়ে মারেন। এতে বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমীনুল ইসলাম নুর সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার বাজারের চরবিশ্বাস ব্যবসায়ী সমিতি চান্দিনা ভিটির ইজারা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। সভায় তিনিসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। সভা চলাকালে বিএনপির লোকজন তাদের ওপর চেয়ার মারতে শুরু করেন। এতে তিনিসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
আমীনুল বলেন, “আমাদের বাড়ির সামনে চরবিশ্বাস বাজারে দুই শতাধিক দোকান আছে। ঈদের আগে চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বাজারের দোকানিদের ডেকে চান্দিনা ভিটির ইজারা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দোকান প্রতি ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। যা সরকারি খরচের তুলনায় অনেক বেশি।
“এর মধ্যে গত ১০ জুন আমার ভাই নুরুল হক গ্রামের বাড়ি এলে দোকানিরা তার সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চান। এ সময় ভাই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ইজারা নিতে দোকানিদের নিষেধ করেন। তিনি উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারা পেতে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে।”
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নুরুল হক তার ফেইসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি, রড, রামদা নিয়ে আমাদের পথরোধ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে।
এর ঘণ্টা তিনেকের মাথায় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এরপর রাত দেড়টার দিকে নুরুল হক ফেইসবুকে আরেকটি পোস্টে তখনও অবরুদ্ধ থাকার কথা জানান। তিনি লেখেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে ‘সন্ত্রাসীদের’ রাস্তা থেকে হটাতে পারেনি।
ফেইসবুকে নুর যে অভিযোগ তুলেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, “নুরুল হক নুর এলাকায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি গত বুধবার প্রকাশ্যে একটি ঠিকাদারী কাজ নিয়ে জেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন।
“বৃহস্পতিবার চরবিশ্বাস বাজারে তার লোকজন বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে এলাকার লোকজন নুরুল হকের ওপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন।”
হাসান মামুন বলেন, “আমি এখন ঢাকায় আছি। এসব ঘটনা ফেইসবুকে দেখেছি। ভিপি নুরের অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জেনে তাকে উদ্ধারের জন্য আমি সেনাবহিনী ও পুলিশ-প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্টও করেছি। আমি চাই, গলাচিপা উপজেলার পরিবেশ শান্ত ও সুশৃঙ্খল থাকুক।”
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি অফিসে হামলাসহ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির পক্ষ থেকেও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মাহমুদুল হাসান বলেন, “সাধারণ মানুষের জানমাল ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
“যেহেতু ১৪৪ ধারা জারি চলাকালীন জমায়েত করা নিষেধ, তাই গণঅধিকার পরিষদের সংবাদ সম্মেলন করতে পারবে না।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উচ্চতর সদস্য রুবিউল হাসান বলেন, “আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তাদের সম্মান জানিয়ে যদি পারি তাহলে সংবাদ সম্মেলন করব।”