Published : 13 Jun 2025, 10:43 PM
পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ানোর পর স্থানীয় প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারার মধ্যে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, “গণঅধিকার পরিষদ ভেসে আসেনি।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার রক্তচক্ষু অপেক্ষা করে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণঅধিকার পরিষদ শান্তিপূর্ণভাবে নিজ এলাকায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।”
শুক্রবার বিকালে গলাচিপা উপজেলা রেস্ট হাউসের সামনে দলের অফিস ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও দোকাপাট-বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এসব কথা বলেন।
শুরুতে নুরুল হক নুর বলেন, “আপনাদের (সাংবাদিক) ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ১৪৪ ধারার মধ্যেও আপনারা সাংবাদিকরা কষ্ট করে এসেছেন।”
ডিসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমি যতদূর তথ্য পেয়েছি, ডিসি সাহেব, ওসি সাহেব, ইউএনও সাহেবসহ এখানে লোকাল প্রশাসন ব্যাপকভাবে চাপ তৈরি করছে, আমি যেন এখানে সংবাদ সম্মেলন করতে না পারি; কথা বলতে না পারি। আমার কোনো নেতাকর্মী যেন এখানে আসতে না পারে। তাই মনে হচ্ছে যে, ডিসি আমার প্রতিপক্ষ, এই পটুয়াখালীর ডিসি গণঅধিকার পরিষদের প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। আসলে কারণগুলো আমি খুঁজে পেলাম না, ডিসির এমন আচরণ কেন হবে?”
তার অভিযোগ, বকুলবাড়িয়াতে পথসভা করতে গিয়ে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীদের হাতে রাতভর অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হয়েছে। রাস্তার মাঝে গাছ ফেলে রামদা, হকিস্টিক দেশীয় অস্ত্রসহ প্রকাশে মহড়া দিলেও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কোনো নিরাপত্তা দিতে পারেনি।
নুরুল হক বলেন, “আমরা চাইলে এর জবাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা চাইনি। এলাকায় কোনো সহিংসতা হোক, আতঙ্ক ছড়িয়ে পরুক, এটা আমার চাই না। তাই নিজেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা আমাদের উপজেলায় পৌঁছেছি।”
তিনি আরো বলেন, “২৪ শে শত শত তাজা প্রাণের বিনিময়ে এই গণঅভ্যুত্থানের পরে সুবিধা নিচ্ছে হাসান মামুনের মত নেতাদের পরিবার। আমি বিএনপির শীর্ষ স্থানের নেতাদের জানিয়েছি, তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, এখন দেখার পালা।“
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নুরুল হক নুর তার ফেইসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি, রড, রামদা নিয়ে তার পথরোধ করেছে। স্থানীয় কয়েকজনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে।
এর ঘণ্টা তিনেকের মাথায় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
এরপর রাত দেড়টার দিকে নুরুল হক ফেইসবুকে আরেকটি পোস্টে তখনও অবরুদ্ধ থাকার কথা জানান। তিনি লেখেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে ‘সন্ত্রাসীদের’ রাস্তা থেকে হটাতে পারেনি।
ফেইসবুকে নুর যে অভিযোগ তুলেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, “নুরুল হক নুর এলাকায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি গত বুধবার প্রকাশ্যে একটি ঠিকাদারী কাজ নিয়ে জেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন।”
তিনি ঢাকায় আছেন দাবি করে বলেন, “ভিপি নুরের অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জেনে তাকে উদ্ধারের জন্য আমি সেনাবহিনী ও পুলিশ-প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্টও করেছি।আমি চাই, গলাচিপা উপজেলার পরিবেশ শান্ত ও সুশৃঙ্খল থাকুক।”
নুরুল হক নুরের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তার দলের জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ছিলেন।