Published : 01 Jun 2025, 12:43 PM
তিন কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ময়মনসিংহ নগরীর অধিকাংশ এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
রোববার ভোর ৬টা থেকে ময়মনসিংহে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চলে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। বৃষ্টি থামার পর দেখা গেছে, নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিসহ নিচু এলাকা সম্পূর্র্ণ পানিতে ডুবে আছে।
ময়মনসিংহ আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক নির্মল চন্দ্র মজুমদার বলেন, “নিম্নচাপটির অবস্থান বর্তমানে
ভারতের উড়িষ্যার দিকে আছে। এটি বাংলাদেশের দিকে আসার সম্ভাবনা আপাতত নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৪ থেকে ৬ নটিক্যাল মাইল। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার ৬টা পর্যন্ত জেলায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “রোববার সকাল ৬ টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আরও কমে আসবে। তবে শনিবার এবং রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, তা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি।”
সরেজামিনে দেখা গেছে, ভারি বৃষ্টিতে বিশেষ করে নগরীর সানকিপাড়া, গোলকিবাড়ী, নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড়, বলাশপুর, খাগডহর, চরপাড়া, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এবং রেললাইন বস্তি এলাকায় হাঁটু পানি জমে গেছে। অনেক দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সড়কে পানি থানায় অনেক গাড়ি মাঝপথে বিকল হয়ে যায়। গাড়ি না পেয়ে অনেকে মানুষ কোমর পানি ভেঙেই গন্তব্যের দিকে রওনা দেন। যাদের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে, বিপাকে পড়েন তারাও।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে এই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ড্রেন পরিষ্কার না রাখার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই শহর পানিতে ডুবে যায়।
গোলকিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাদিজাতুল কোবরা বলেন, “সকাল থেকেই প্রচুর বৃষ্টি। বাসা থেকে বের হয়ে সানকিপাড়া আসতেই দেখি কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। খুব কষ্ট করে স্কুল আসতে হয়েছে।”
সানকিপাড়া এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলছিলেন, “জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নত না হওয়া। কয়েক বছর ধরে ড্রেনের কাজ করা হলেও এর সুফল আমরা পাচ্ছি। বেঁচে থাকতে সুফল পাবো কি না তাও জানি না।”
সানকিপাড়া বাজারের দোকানি আবুল হোসেন বলেন, “কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে দোকানের ভেতর হাঁটু পানি উঠে মালামাল সব ভিজে গেছে। সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে প্রতি বছর আমাকে এই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।”
সানকিপাড়া অটোরিকশা চালক রুহুল আমিন বলেন, “সকাল থেকে বলা চলে শহরের প্রত্যেকটি রাস্তা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। কোনোভাবেই রিকশা চালাতে পারছি না। বর্ষাকালে প্রায়ই আমাদের এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।”
নগরীর টাউন হলের মোড়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষার্থী মাহফিদুল ইসলাম বলেন, পঁচা-দুর্গন্ধ পানি মাড়িয়ে কলেজে যেতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে যায়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।”
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “নগরীতে অনেকগুলো ড্রেনের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আবার নতুন করে ১২০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।”
তার ভাষ্য, “এ বছর কিছুটা জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকলেও সামনের বছর উপকার পাবেন নগরবাসী। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নগরবাসীকে স্বস্তি দেয়ার জন্য।”