Published : 26 Mar 2025, 12:11 PM
স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন দুটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রসংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ এক পর্যায়ে তাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সুযোগ দেয়।
ছাত্র সংগঠন দুটি হল- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রাত ১২টার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকজন ছিলেন। তারা সেখানে গিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের দরজা বন্ধ দেখতে পান। তখন ফটকের সামনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নিরাপত্তাবলয় ছিল।
ছাত্রসংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে তারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারে গেলে সেখানে থাকা পুলিশ তাদের জানায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সূর্যোদয়ের আগে কেউ ফুল দিতে পারবেন না। এ সময় তারা এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে সংগঠন দুটির নেতা-কর্মী এবং উপস্থিত জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হন।
শহীদ মিনারের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তারা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা ‘এই রাষ্ট্রের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই শহীদ মিনারের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই পুলিশের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘জবাব চাই জবাব দে, নইলে তালা খুলে দে’-সহ নানা স্লোগান দেন।
এক পর্যায়ে পুলিশ ফটকের তালা খুলে দেয়। এরপর উপস্থিত ছাত্র-জনতাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ জানায়। পরে ছাত্রসংগঠন দুটির নেতাকর্মীরা নগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তারা স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ জানান।
রাতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ ফেইসবুকে পোস্টে লেখেন, ঘটনাটি "শহীদ মিনারে আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপ’। উপস্থিত ছাত্র-জনতা শহীদ মিনারে এই ঘৃণ্য আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুলিশ প্রশাসন এক পর্যায়ে তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা দিবসে যে পোশাক ফুল দিতে বাধা দেয়, সেই পোশাককে জনগণের মুখোমুখি হতেই হবে।
রাতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশটা লাখো শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই দেশের নাগরিক শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ফুল দেবে এটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতাকে যখন লড়াই করে আদায় করতে হয় তখন এই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
“আমরা এসবের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখব এবং শহীদ মিনার সকল প্রকার আমলাতান্ত্রিকতার সেনশরশিপ থেকে মুক্ত করব।”
রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, “২৬ মার্চ রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম। আমাদের নিদের্শনা আছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি করে প্রোগ্রাম শুরু হবে। এ সময় রাষ্ট্রের সবাই এক সঙ্গে ফুল দেবেন। এজন্য এখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রয়েছে, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়।
“যেহুতু উনারা এসেছেন, আমি আমার ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা বলেছেন, সম্মান প্রর্দশনের বিষয়ে উনারা ফুল দিতে পারেন। যদি কেউ দিতে চায় এখন দিতে পারেন। মূল রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম তো সকালে, সবকিছুর একটা টাইম থাকে।”
বুধবার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “জাতীয় সিদ্ধান্ত, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার। সেই সিদ্ধান্তের প্রতি সবার সম্মান দেখানো উচিত।”