Published : 21 May 2025, 09:44 AM
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং বসানোর দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করার পাঁচ বছরেও চালু হয়নি। দক্ষ জনবলের অভাবে এসব যন্ত্র চালু করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এমন পরিস্থিতিতে গত ৮ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দুটি ক্যাথল্যাবের একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।
ক্যাথল্যাব অন্য জেলায় চলে যাওয়ার খবরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্রেড হাউস মানিকগঞ্জ মেডিকেলে ক্যাথল্যাব দুটি সরবরাহ করে। কিন্তু দক্ষ জনবলের কারণে এনজিওগ্রাম ও হার্টের রিং বসানোর এসব মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি।
প্রায় পাঁচ বছর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মো. শাহাদত হোসেন কবির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাবের একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিপুল রোগীকে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অব্যবহৃত দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্য থেকে উপযুক্ত একটি চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি উপযুক্ত ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।
এ বিষয়ে চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ক্যাথল্যাব অন্য জেলায় চলে যাওয়ার খবরে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত ক্যাথল্যাব চালুর দাবি জানিয়েছেন।
হার্টের রোগীদের চিকিৎসার কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাথল্যাব চালুর দাবি জানিয়ে হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা সুমন হোসেন বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় ক্যাথল্যাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালের ক্যাথল্যাবগুলো সচল হলে হাজার হাজার রোগীর জীবন বাঁচবে। একটি ক্যাথল্যাব অন্যত্র চলে গেলে এ জেলার রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। চার বছরেও কেন ল্যাব দুটি চালু করা গেল না?
“মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারেন না। শুনছি, জনবল সংকটের কথা তারা বলেছেন, তাহলে তারা জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা কেন নিলেন না?”
ক্যাথল্যাব দুটি মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজই চালু করার দাবি জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক।
মানিকগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, “মেডিকেল কলেজের ক্যাথল্যাব দুটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত রয়েছে। সেখান থেকে একটি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এটি চলে যাওয়া জেলার জন্য এক ধরনের মহাবিপদ। যারা এটি চালু করতে পারেননি, তারা এর দায় এড়াতে পারেন না।”
দক্ষ জনবলের অভাবে ক্যাথল্যাব দুটি চালু করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমি যোগদানের পরে ক্যাথল্যাব চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে। রোগী পেলে একটি ক্যাথল্যাব চালু করা হবে।”
একটি দিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি ক্যাথল্যাব দিয়েও রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আরেকটা ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।