Published : 05 Jun 2025, 09:26 AM
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভেড়ামারা থেকে ফরিদপুর উপজেলার হাদল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘদিন সংস্কারহীন থাকায় সড়কটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন চার উপজেলার মানুষ ও যানবাহন। ফলে এ পথ ব্যবহারকারী ও এলাকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বেহাল সড়কটি সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সড়ক দিয়ে ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও আটঘরিয়া উপজেলার লোকজন যাতায়াত করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি ২০১২ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি নির্মাণ করে। রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৩ কিলোমিটার। নির্মাণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। এরপর একে একে পুরো রাস্তাটিই ভেঙে পড়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণের সময় ‘নিম্নমানের’ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে সড়কটি বেশি দিন টেকসই হয়নি। নির্মাণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই এটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
বর্তমানে সড়কটির অধিকাংশ অংশেই বড় বড় গর্ত, ভাঙাচোরা খোয়া এবং কোথাও কোথাও কাঁচা মাটির মতো হয়ে গেছে। বর্ষাকালে এসব গর্তে পানি জমে চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি শুকনো মৌসুমেও এই রাস্তায় চলতে গিয়ে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা পড়েন চরম ঝুঁকিতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থী, কৃষক, ব্যবসায়ী, রোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চলাচল করেন। একটি রাস্তা এলাকার জীবনমানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এতদিন ধরে কোনো সংস্কার না হওয়া দুঃখজনক।
অবিলম্বে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে বাজারে যেতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে হলে আরও সমস্যা হয়। এমনকি গর্ভবতী নারীদের নিয়ে যেতে অনেক সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। সড়কটি এখন নরকে পরিনত হয়েছে।”
একই এলাকার শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন বলেন, “প্রতিদিন কলেজে যেতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। গাড়ি পাওয়া যায় না। আর পেলেও রাস্তায় এত গর্ত যে গাড়ি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। আমরা না হয় কষ্ট করে গেলাম, কৃষিপণ্য নিয়ে বাবা-চাচা বা গ্রামবাসীর কষ্ট দেখলে মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। আমরা কোথায় বসবাস করছি?।”
এ পথে চলতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন গাড়ির চালকরা। অটোরিকশা চালক আব্দুল আহাদ বলছিলেন, “এই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন আমাদের গাড়ির চাকা, যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যাত্রী নিয়ে যেতে ভয় লাগে, দুর্ঘটনা হলে তো সব দোষ আমাকে দেবে।”
পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক রাস্তার দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানানো হলেও এখনো কোনো সংস্কার কাজ শুরু হয়নি।
একদন্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন বলছেন, “বিভিন্ন প্রয়োজনে বা কাজকর্মে আমাদের এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যেতে হয়। কিন্ত ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর যেতে এ রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, “আমি নিজে সড়কটি পরিদর্শন করেছি। আমরা রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রকল্প অনুমোদন হলে দ্রুত সড়কটির কাজ শুরু হবে।”
পাবনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, “ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে।”