Published : 01 May 2025, 02:45 PM
লক্ষীপুর জেলা সদরের উত্তর চর রমনী গ্রামের মো. সোহেল ‘ফেনী সৌদিয়া হোটেল অ্যন্ড রেস্টুরেন্টের’ কর্মী ছিলেন। সেখানে কাজ করার সময় এক দুর্ঘটনা তার একটি হাত কেটে যায়। এ ঘটনায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ফেনী শ্রমিকের পক্ষে মামলা করে।
এ দপ্তরের শ্রম পরিদর্শক মো. ইয়াসিন হোসেন বলেন, “বিষয়টি জানার পর কুমিল্লার শ্রম আদালতে আমরা মামলা করি। এতে ফেনী সৌদিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিক ও তার চিকিৎসা খরচ বহন করে।
“এছাড়া সোহেলকে ব্যবসা করার জন্য বাড়ির পাশে একটি দোকান করে দেওয়া হয়। চুক্তি হয়, প্রতি বছর যাকাত বা অনুদান থেকে হোটেলপক্ষ একটি অনুদান তাকে প্রদান করবে।”
“শ্রম আদালতে বিচার চেয়ে হোটেল কর্মী সোহেল সুফল পেলেও আইনিভাবে চাইলে শ্রমিকরা তাদের যে তাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়-অবিচারের ‘ন্যায়বিচার’ পেতে পারেন, তা জানেন না অনেকেই।” বলছিলেন কুমিল্লা শ্রম আদালতের আইনজীবী মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ শ্রমিকই জানেন না শ্রম আদালত সম্পর্কে। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়লে উপকার পাবেন শ্রমিকরাই।”
বৃহত্তর কুমিল্লার ছয় জেলার শ্রমিকদের কাছে শ্রম আইনের সুফল পৌঁছে দিতে ২০২৩ সালের মে মাসে কুমিল্লা শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ দপ্তরের কার্যালয় কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেল লাইনের পাশে। এ আদালতে এখন পর্যন্ত চলমান মামলার সংখ্যা ১৫২টি।
শ্রম আদালত কুমিল্লার রেজিস্ট্রার সুব্রত নাথ বলছিলেন, “মামলা খুব কম। বিনা খরচে রায় পাচ্ছেন শ্রমিকরা। তবে এই আদালতের কার্যক্রম ও সুফল সম্পর্কে জানে না সাধারণ শ্রমিকরা।”
কুমিল্লা শ্রম আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মে মাসে চট্টগ্রাম থেকে আলাদা হয়ে কুমিল্লায় যাত্রা শুরু করে শ্রম আদালত। কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে নিয়ে এ বিশেষায়িত আদালত গঠন করা হয়। এ কার্যালয়ে কাজ শুরু হয় চট্টগ্রামের শ্রম আদালত থেকে ১৪৮টি মামলা নিয়ে।
শ্রম আদালতের আইনজীবী কামরুল হাসান বলছিলেন, “এ কোর্টে আমার অধীনে মামলার সংখ্যা ১২৫টি। মালিকপক্ষের টাকা আছে। তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা স্টে করে দেয়। নয়তো তিন কর্ম দিবসেও মামলার নিষ্পত্তি হয়। আবার অনেক শ্রমিক শ্রম আদালতের বিষয়ে জানেনও না। শ্রম আদালতের বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করা দরকার।”
শ্রম আদালত কুমিল্লার রেজিস্ট্রার সুব্রত নাথ বলেন, “ছয় জেলার শ্রমিকরা বিনা খরচে, এমনকি কোর্ট ফি ছাড়া মামলা করতে পারেন। ২০২৩ সালের মে মাসে এ কোর্ট যাত্রা শুরু করে ১৪৮টি মামলা নিয়ে। প্রথম বছরে ১১৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। চলতি বছরে ৪৩টি মামলার রায় হয়েছে। বর্তমানে ১৫২টি মামলা চলমান আছে।
“এছাড়া শতাধিক মামলা উচ্চ আদালতের ‘স্টে অর্ডার’ আছে। তবে চলতি বছরে সবগুলোর রায় দেওয়া সম্ভব।”
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-মহাপরিদর্শক সৈয়দ নাজমুল রাশেদ বলেন, “আমরা প্রতিমাসে দুটি কারখানায় অবহিতকরণ সভা করি। তবে শ্রমিকদের মাঝে তাদের অধিকারের বিষয়ে ব্যাপক ভাবে প্রচার করা দরকার।
“তবে শ্রম আদালতের নিজস্ব স্টাফ নেই। ভাড়া ভবনে কোর্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যদি নিজস্ব জনবল থাকে, কাজে গতি পাবে।”