Published : 15 May 2025, 01:48 PM
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ও নিরাপদ মাংস নিশ্চিত করতে গোপালগঞ্জ জেলায় ৩৯ হাজার ৭৬৯টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
পাঁচ উপজেলার ৪ হাজার ৫১৭টি খামারে এসব গবাদি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার।
তিনি বলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ মেনে খামারিরা গবাদি পশুগুলো মোটাতাজা করেছেন। এসব প্রাণীকে মোটা-তাজা করতে কোনো প্রকার রাসায়নিক বা অপদ্রব্য পুশ করা হয়নি।
“খড়, গম ও ডালের ভূষি, ঘাস, খৈইল, কুড়া খাইয়ে এসব পশু পালন করা হয়েছে। ফলে এসব পশুর মাংস মানুষের দেহের জন্য নিরাপদ।”
তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদের জন্য খামারগুলোয় এখন শেষ সময়ের পশু লালন-পালনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও তদারকি অব্যাহত রেখেছে।
“এখন এইসব পশু নিরাপদে বাজারজাতকরণের জন্য আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি। ইতিমধ্যেই খামার থেকে গবাদি পশু বিক্রি শুরু হয়েছে।”
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গবাদি পশুর মধ্যে আছে ১৯ হাজার ২৭৬টি ষাঁড়, ১১০টি বলদ, ৫ হাজার ৬৪৪টি গাভী, ১৬টি মহিষ, ১৪ হাজার ৬১৪টি ছাগল এবং ৮২টি ভেড়া।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে ৩০টি গরু মোটা-তাজা করেছেন মুকসুদপুর উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের খামারি হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “এই বছর গো খাদ্যের দাম ছিল খুবই চড়া। তাই মোটাতাজা করতে বাড়তি খরচ হয়েছে। ভারত অথবা অন্য দেশ থেকে পশু না আসলে কোরবানির হাটে আমাদের গবাদি পশুর ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশা রয়েছে।”
স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদি পশু বাজারজাত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত গবাদিপশুর ন্যায্য মূল্য পেলে আমরা লাভবান হব। আমাদের সারা বছরের পরিশ্রম সার্থক হবে।”
এ বছর ৬০টি গরু মোটাতাজা করেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের খামারি আরিফ। তিনি বলেন, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশনা প্রতিপালন করে গরু মোটাতাজা করেছি। মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছি।
গত বছরের তুলনায় এ বছর অন্তত ২০ শতাংশ অতিরিক্ত খরচ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এখন প্রত্যাশিত মূল্য পেলে লাভের মুখ দেখতে পারব। আর যদি বিদেশি গরু পশুর হাট দখল করে তাহলে দেশি গরুর চাহিদা কমবে। এতে বাজার দর কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লোকসানের আশংকা আছে।”
হাটে বিদেশি গরুর আমদানি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান এ খামারি।
এদিকে জেলার পাঁচ উপজেলার এবার ১৫টি স্থানে গবাদি পশু ক্রয়-বিক্রয়ের হাট বসছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় তিনটি, মুকসুদপুরে চারটি, কাশিয়ানীতে তিনটি, কোটালীপাড়ায় চারটি ও টুঙ্গিপাড়ায় একটি পশুরহাট বসছে।
প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, এসব হাট তদারকির জন্য ইতিমধ্যে ১৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমগুলো পশুর হাটে সার্বক্ষণিক সেবা দেবে।
“এছাড়া চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিসিকের সহায়তায় আমরা গবাদি পশু ক্রেতাকে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করব। এই লবণ মাদ্রাসাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।যাতে মাদ্রাসায় আসা পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।”
এছাড়া জাল টাকা লেনদেন বন্ধ ও ছিনতাইকারীদের হাত থেকে গবাদি পশু ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুরক্ষায় গোপালগঞ্জের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস লেনদেনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রভাস চন্দ্র সেন বলেন, “গবাদি পশুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমরা হাটগুলোতে ভারতসহ অন্যান্য দেশের পশু ক্রয়-বিক্রয় নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, খামারিরা কোরবানির হাটে ন্যায্যমূল্যে গবাদি পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন।
“এছাড়া গবাদি পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নিরাপদে কোরবানির পশু পরিবহনে সব ধরনের আশ্বাস দিয়েছে।”
এসব উদ্যোগের কারণে এবার কোরবানির গবাদি পশু বাজারজাত নিয়ে খামারিরা হয়রানির শিকার হবেন না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা।