Published : 09 May 2025, 02:27 PM
খাগড়াছড়িতে অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার ঘটনায় তিন দিনে পাঁচটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দুটি ঘটনায় আদায় করা হয়েছে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ।
পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়িতে এত সংখ্যক মামলার ঘটনা এবারই প্রথম বলে শুক্রবার জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ।
তিনি বলেন, “কয়েক বছর থেকে খাগড়াছড়িতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব কার্যালয় খোলা হয়েছে। এরপর থেকে পাহাড় কাটার অভিযোগে ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি।
“শুষ্ক মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় কর্তনের ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় পাহাড় কর্তনের ঘটনায় এর মধ্যেই মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মানিকছড়িতে দুটি, দীঘিনালায় দুটি, রামগড়ে একটি মামলা করা হয়।“
এছাড়া ভিন্ন দুইটি ঘটনায় তিন লাখ পনের হাজার টাকা পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয় বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।
মামলাগুলির বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ৬ মে দীঘিনালার বোয়ালখালি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে পোমাংপাড়ার বাসিন্দা প্রীতি রঞ্জন ত্রিপুরার বিরুদ্ধে দীঘিনালা থানায় পরিবেশ আইনে মামলা করা হয়।
সেদিন দীঘিনালায় মেরুং ইউনিয়নের মধ্যবোয়ালখালীর আলী মিয়ার বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়।
এর আগে ৫ মে মানিকছড়ির যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের গাড়িটানা এলাকার আবু তাহের মোল্লা ও মো. জানে আলমের বিরুদ্ধে মানিকছড়ি থানায় পরিবেশ আইনে মামলা করা হয়।
এছাড়া ৪ মে মানিকছড়িতে পাহাড়ের মাটি কাটার অভিযোগে নুর ইসলাম ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
একইদিন রামগড়ের শশ্মানটিলা এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর, মো. সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা করা হয়।
সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে এসব মামলা করেন।
মামলার পাশাপাশি পাহাড় কাটার ঘটনায় রামগড়ে পুতুল বাহাদুর ছেত্রী, পপি রোয়াজা, কমলি ত্রিপুরা, বিজয় চন্দ্র দে, বিনয় ত্রিপুরাকে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া দীঘিনালার পশ্চিম কাঁঠালতলী এলাকার রোকেয়া বেগম ও রমজান আলীকে পাহাড় কাটার দায়ে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বলেন, “পাহাড় কেটে আসামিরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধন, ২০১০) এর ধারা ৬(খ) লঙ্ঘন করেছেন যা একই আইনের ১৫ (১) (সংশোধিত, ২০১০) ক্রমিক নং-৫ অনুসারে দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
পরিবেশের সুরক্ষায় আগামীতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে জরিমানার পাশাপাশি পরিবেশ আইনে মামলা করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশবাদীরাও।
খাগড়াছড়ির পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা সংগঠন পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, “শুষ্ক মৌসুম আসলেই একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কাটা শুরু করে। তাদের লোভের কারণে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।
“আগে কেবল জরিমানা করার কারণে অপরাধীরা জরিমানা পরিশোধ করে পার পেয়ে যেত। এবার মামলা হওয়ায় পাহাড় খেকোরা পুনরায় পাহাড় কাটার সাহস পাবে না।”
তবে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করতে পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলাসহ জরিমানার এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে, বলেন রাসেল।