Published : 11 Dec 2024, 08:41 PM
সিলেটের পাহাড়-টিলা, নদী ও পর্যটনকেন্দ্র থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় প্রশাসনের কার্যকরি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলা আয়োজিত মতবিনিময় সভায়।
বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীরপাড় এলাকায় হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনালের হল রুমে বেলা আয়োজিত ‘সিলেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা’ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা হয়।
এতে বক্তারা বলেন, যান্ত্রিকভাবে এসব পাথর উত্তোলনে পরিবেশগত বিষয়ে কোনো চিন্তা করছেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
তারা বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের এসব কর্মকাণ্ডে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে যা ভূ-প্রকৃতিকে বড় ঝুঁকিতে ফেলবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তৎপরতা নেই। এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়েছে তা নিয়ে একডেমিক কিংবা সরকারি জায়গা থেকে বড় কোনো গবেষণা করা হচ্ছে না।
গবেষণার মাধ্যমে অবৈধ পাথর উত্তোলনে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির দিকটি নিরূপণ করা প্রয়োজন। এজন্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণায় জোড় দিতে হবে।
বেলার আয়োজনে সভায় জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেটের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা শিরিন আক্তারের সভাপতিত্ব করেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বেলা সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে ছিলেন- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মিছবাহ উদ্দিন, পেট্রেলিয়াম ও খনি প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম।
সভায় অধ্যাপক মিছবাহ বলেন, “১৯৯৩ সালে যখন জাফলংয়ে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে পরিববেশগত একটি বৈচিত্র ছিল, কিন্তু তা এখন আর নেই। বর্তমান জাফলং আর এখনকার জাফলং অনেক তফাত। পাথর উত্তোলন করতে হলে পরিবেশ-প্রতিবেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
“সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তা তখনই সম্ভব যখন সেখানকার পরিবেশ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সরকারকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পূর্বের অবস্থায় ফিরলে তখন সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করা যেতে পারে। পাশাপাশি পাথার কোয়ারিগুলো থেকে যন্ত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে লাগামহীন পাথর উত্তোলনে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা গবেষণা করা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “পাথর কোয়ারি থেকে সরকার বেশি রাজস্ব পাচ্ছে, নাকি পর্যনটন শিল্প থেকে বেশি ইনকাম হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা ও জরিপ প্রয়োজন। কোনটা থেকে সরকার রাজস্ব বেশি পাচ্ছে সেটাও জানা যাবে। পর্যটন খাতে বেশি রাজস্ব আয় হলে তা সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারকে সেই খাতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।”
শফিকুল ইসলাম বলেন, “সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনে কয়েকটি সুবিধা আছে। এ জন্য অনেক জনবলের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে এর পাশ কাটিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-মালিকরা ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। তারা যন্ত্রের ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করেন। তারা যুক্তি দেন যে পাথর উত্তোলন না করলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি চরম অজুহাত। জাফলংয়ের নদীতে পাথর জমে থাকার কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। আর এটি বন্যার কারণ হতে পারে না। বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে বর্তমান প্রশাসন খুব দুর্বল। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও তারা কোনা ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।’’
“বালু-পাথর উত্তোলনে আমরা মানবিক না, আমরা সভ্য জাতি না। এজন্য লুটপাট হচ্ছে। পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করে পাথর উঠাতে হবে। আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি নষ্ট করে পাথর উঠানো যাবে না। এ ব্যাপারে মানুষের মানবিক বোধ জাগ্রত করতে হবে। প্রশাসনকে জবাবাদিহিতার আওতায় আনতে হবে,” বলেন তিনি।