Published : 16 Aug 2024, 05:57 PM
১৫ অগাস্ট রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একদল যুবকের হাতে লাঞ্ছণার শিকার আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, তাই গিয়েছিলাম’।
হেনস্তার শিকার হয়ে অপমান সইতে না পেরে হৃদরোগে মারা গেছেন- এমন বিভ্রান্তি ও গুজবের মধ্যে শুক্রবার আব্দুল কুদ্দুস মাখন জানান, তিনি ভালো আছেন। বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে শরীরে মারধরের প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর ১৫ অগাস্ট পালন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে টান টান উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার দিনভর বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার পথে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে একদল যুবক মানুষকে বাধা দেয়। তাদের বিরুদ্ধে হামলা, মারধর, নারীদের গায়ে হাত তোলা, বিবস্ত্র করে লাঞ্ছণা করা, কান ধরে উঠবস করানো, মোবাইল ফোন তল্লাশি করাসহ নানা অভিযোগ ওঠে।
১৫ অগাস্টের প্রথম প্রহরে ৩২ নম্বরের রাস্তা আটকে ডিজে পার্টি করে হিন্দি গানের সঙ্গে কিছু যুবককে দীর্ঘসময় ধরে নাচানাচি করতেও দেখা যায়।
সকালে অন্য অনেকের মত শেরপুরের আব্দুল কুদ্দুস মাখনও গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে। তাকে লাঠিধারী যুবকেরা আটক করে প্রথমে বিবস্ত্র করে; পরে একটি রিকশায় উঠিয়ে তাকে নাচতে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আব্দুল কুদ্দুস মাখনকে লাঠিধারী যুবকেরা শরীরের নানা স্থানে খোঁচা দিচ্ছেন এবং উল্লাস করছেন। বিষয়টি নিয়ে দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়। এর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগও আনেন কেউ কেউ।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, “বয়স্ক অনেককে কান ধরে উঠবস করানো, বিবস্ত্র করা, অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা, নারীদের গায়ে হাত তোলা, সাংবাদিকদের উপরে হামলাসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার।”
এ ঘটনার সঙ্গে কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক জড়িত থাকলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান সারজিস।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুস মাখনের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের খাকডহর এলাকায় তার পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেন, “আমি প্রতিবছরই জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তার বাসভবনে যাই। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে আমি আমার মোহাম্মদপুরে বাসা থেকে বের হয়ে অটোরিকশায় ধানমন্ডি ৩২ এর কাছাকাছি পৌঁছাই। তখন চুল-দাঁড়ি পাকা বয়স্ক একজন লোক আমার অটোরিকশার গতিরোধ করে।
“তিনি ‘আওয়ামী লীগের লোক পাইছি’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। তখন আরও কিছু যুবক লাঠি হাতে সেখানে দৌড়ে আসে। একপর্যায়ে তারা আমার ওপর হামলা করে। অনেক মারধর করে এবং আমাকে বিবস্ত্র করে ফেলে। আমাকে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে মারধর আর হেনস্তা করা হয়।”
তিনি বলেন, “আমার কাছে থাকা টাকা-পয়সা, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে ছিনিয়ে নেওয়া ছয় হাজার টাকার মধ্যে দুই হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি একজন রিকশাচালকের কাছ থেকে একটি গামছা পরে বাসার দিকে রওনা হই।
“পথে আরেক দল আমাকে মারপিটের ভয় দেখিয়ে দুই হাজার টাকার নিয়ে নেয়। তখন আমি রিকশা থেকে নেমে যাই। পরে একজন অটোরিকশা চালক দয়াবশত আমাকে মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌঁছে দেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আমি বাসায় ফিরে আসি।”
আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেন, “আমি বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক। বর্তমানে আমার কোনো পদবি নেই। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ নামে একটি সংগঠন করেছিলাম। আমরা এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে স্মৃতিচারণ করতাম। আমি ওই সংগঠনের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলাম, পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছি।”
তিনি বলেন, “আমি নব্বইয়ের দশকে ময়মনসিংহ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে বুকে লালন করি। ভালবাসার টানেই বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির ভবনে উদ্দেশে গিয়েছিলাম। হাজার হাজার লোকের মধ্যে ফুল দিলে আমাকে কে দেখতো।”
আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেন, “আমাকে যারা গতকাল হেনস্তা ও লাঞ্ছিত করেছে আল্লাহ সবার সঠিক বিচার করবেন। এ ঘটনায় আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার ত্যাগ ও ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছে। দেশবাসীর উদ্দেশে বলি, আমি জীবিত আছি, ভালো আছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”