Published : 16 Jun 2025, 05:21 PM
জামালপুর সদর উপজেলায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাইকিং করে সাতটি পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করার দুই দিন পর আরেক বৈঠকে ভুল স্বীকার করে ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সালিশকারীরা।
রোববার রাতে শহরের উপজেলার দাপুনিয়া পশ্চিম পাড়ায় বসা বৈঠকে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেয়ে ওই সাত পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানান জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন।
এর আগে শুক্রবার রাতে ওই সাত পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করার পরদিন শনিবার রাতে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন দাপুনিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী ইসমাইল মৌলভী।
অভিযোগে বলা হয়, “শুক্রবার দুপুরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দাপুনিয়া এলাকার মো. মন্টুর সঙ্গে একই এলাকার মো. মুনছুরের ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় ওইদিন রাত ৮টায় এলাকায় সালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে মুনছুর মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন শামীম আহমেদ ও আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন।
“দাবি করা টাকা দিতে না পারায় রাত ১১টার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাইকিং করে সাত পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়। সেইসঙ্গে এসব পরিবারের সদস্যদের মসজিদ, দোকান, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, বাজার ও প্রকাশ্যে রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করতে দেখলে তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।”
অভিযোগে দাপুনিয়া গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ বানু, মো. শামিম আহাম্মেদ, মো. আমিনুল ইসলাম, মিন্টু মিয়া, মোছা. আমেনা বেগমসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
থানায় অভিযোগের পর নড়েচড়ে বসেন সালিশকারীরা। পরে রোববার রাত ১০টার দিকে ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দাপুনিয়া সমাজ উন্নয়ন সংগঠনের কার্যালয়ে আবার সালিশ বসে। এতে ওই এলাকার কয়েকশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনজীবী আনিছুর রহমান মানিক বলেন, “সালিশকারীরা তাদের দায় স্বীকার করে এক ঘরে করে রাখা সাত পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তারা এলাকাবাসীর সামনে ভুল স্বীকার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একসঙ্গে বসবাসের অঙ্গীকার করেছেন।”
তিনি বলেন, রাতেই ভুল সংশোধন করে মাইকে সাতটি পরিবারের বিরুদ্ধে নেওয়া আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সোমবার সকাল থেকে ওই এলাকায় সব বাসিন্দা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এই আইনজীবী।
দাপুনিয়া গ্রামের ইসমাইল মৌলভীর ছেলে মৌকিব হোসেন বলেন, সালিশকারীরা ভুল স্বীকার করে মাইকিং করেছেন। তাদের মাঝে আতঙ্ক কেটে গেছে। একটা সভ্য দেশে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন জামালপুর নাগরিক ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের বর্বর ঘটনা না ঘটাতে পারে সে জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। রোববারের মধ্যে সমস্যার সমাধান না করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। সালিশকারীরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
এরপরও দাপুনিয়া গ্রামের দিকে পুলিশের নজরদারি থাকবে বলে জানান তিনি।