Published : 22 May 2025, 08:49 PM
নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশ বাতিলের দাবি এবং নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘স্বরূপ ইসলামিক কালচারাল অরগানাইজেশন’ এর ব্যানারে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী জান্নাতুল সুমাইয়া সাফি বলেন, “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের উপস্থাপিত বেশিরভাগ প্রস্তাব ইসলামি মূল্যবোধ ও জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব প্রস্তাব নারীর প্রকৃত মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। স্বাধীনতা ও সমতা নিশ্চিত করার নামে উত্থাপিত এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দাম্পত্য জীবনে ভুল বোঝাবুঝি ও কলহ আরও বাড়বে।
“প্রস্তাবে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্মতির অভাবকে বৈবাহিক ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান রাখার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও জটিল, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আস্থার জায়গাটিকে দুর্বল এবং পারিবারিক অস্থিরতা বাড়াবে।”
এ সময় তিনি বলেন, “এ প্রস্তাবে যৌনকর্মীদের শ্রমজীবী হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলাম ও সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা কখনোই পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। বরং এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে। তাই আমরা দাবি করছি, এ ধরনের বিতর্কিত ও বিভ্রান্তকর প্রস্তাব দ্রুত বাতিল করা হোক।”
‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’র সমালোচনা করে আরেক শিক্ষার্থী আদিবা সালেহা বলেন, “মৈত্রী যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর উপস্থিতি নেই। উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অশালীন পোশাকে নারীর অধিকার আদায়ের নামে নারীর ভূষণকে খর্ব করা হয়েছে, ধর্মীয় শিষ্টাচারকে উগ্রবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যা ধর্মীয় অবমাননা। ট্রান্স মুক্তিকে নারীমুক্তি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। যেখানে অধিকাংশ কার্যক্রম নারীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
“তারা এলজিবিটিজিকে প্রমোট করছে। যা আমাদের মানবসম্প্রদায়ের জন্য একটা বিধ্বংসী মতবাদ। অথচ ট্রান্সজেন্ডার ধারণা বিকৃত মস্তিষ্ক থেকেই উদ্ভূত, মানবকল্যাণে যার বৈধতা নয়; বরং চিকিৎসার প্রয়োজন।”
এ সময় প্রতিবাদকারী নারী শিক্ষার্থীরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল- নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে অবজ্ঞা করে গঠিত বর্তমান কমিশন বাতিল করে ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাসী এবং দেশের অধিকাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন এমন প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, পতিতাবৃত্তি নির্মূলের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট নারীদের মানবিক ও হালাল উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় বিধানসমূহকে সংবিধানের আলোকে রক্ষা করে নারী উন্নয়নের একটি ভারসাম্যমূলক ও সমাজবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কর্মসূচি চলাকালে ‘নারী পুরুষ বাইনারি, এই শর্তেই দেশ গড়ি’, ‘যৌনকর্মী স্বীকৃতি দান, মায়ের জাতির অপমান’, ‘সমঅধিকার নয়, চাই ন্যায্য অধিকার’, ‘নারী পুরুষ একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোগী’, ‘পতিতাবৃত্তিকে না বলি’, ‘সমতার নামে নারীর বিকৃতি চলবে না’, ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চাই, অপসংস্কৃতি চলবে না’- স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।