Published : 05 Jun 2024, 11:30 PM
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পর এক শিক্ষার্থী অভিযোগ দেওয়ায় তাকে ফের বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গভীর রাতে তাকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির হলের কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার ৩০৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন আহত শিক্ষার্থী শাহরীন রহমান।
শাহরীন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট মো. তানভীর ইসলামকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে বিচার চেয়েছেন।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন চিকিৎসাধীন শাহরীনকে দেখতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যান।
তিনি বলেন, “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিল না। সে জানিয়েছে তাকে আবরার ফাহাদের মতো মারা হয়েছে।”
জানা যায়, সোমবার ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটির জেরে শাহরীন রহমানকে মেরে তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহীনূরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন।
ভুক্তভোগী শাহরীন বলেন, “মাথা ফাটিয়ে দেওয়ায় ঘটনায় বিচার চাওয়ায় মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আমাকে ঘুম থেকে তুলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে যান আমার বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম।
“৩০৬ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় ১০-১৫ জন আমার ওপর অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারলে আমি রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে পাড়াতে থাকে।”
তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শাহরীন বলেন, “এ সময় তারা আমাকে বলতে থাকে কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? এক পর্যায়ে তারা মোটা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করে।”
ভোর ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় এমন নির্যাতন চলে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই সময় মনে হচ্ছিল, আমিও মনে হয় আবরার ফাহাদের মতো মরে যাব।”
শাহরীন জানান, মারধরে অংশগ্রহণ করে আশিকুজ্জামান লিমন (পিইএসএস), ইসাদ (পিইএসএস), রায়হান রহমান রাব্বি (পদার্থবিজ্ঞান), বেলাল হোসেন (এফবি), শেখ বিপুল (পিইএসএস), রাইসুল হক রানা (ফার্মেসি)সহ আরও কয়েকজন।
শাহরীন বলেন, “প্রাণে বাঁচতে আমি ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাই। এ সময় ভাই বলেন, ‘কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো’।
“এ সময় ভাই আমার বুকে লাথি মেরে আমাকে মেঝেতে ফেলে দেন। বলেন, ভোর হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি। ক্যাম্পাসে যেন তোকে আর না দেখি।”
শাহরীন জানান, এরপর শাহরীন যেন কাউকে না জানাতে পারে সেজন্যে আমিনুল ইসলাম তার মোবাইল নিয়ে রেখে দেন। এক পর্যায়ে ঘটনা জানাজানির ভয়ে বুধবার সকাল ১০টার দিকে শাহরীনকে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে চলে যান আমিনুল ও রাজীব। পরে জানাজানি হলে চাপে পড়ে দুপুরের দিকে শাহরীনকে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেন তারা।
শাহরীন বাড়ি পৌঁছানোর পর তার মাকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল দিয়ে বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান শাহরীন।
এ ঘটনায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে একাধিকবার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”