Published : 01 Jun 2025, 05:33 PM
টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের আশপাশের সীমান্তবর্তী কয়েক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কিছু পরিবার।
শনিবার গভীর রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি উপজেলায় নামতে শুরু করে। রোববার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আখাউড়ার হাওড়া নদীর বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে টানা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে আখাউড়া বিভিন্ন নদী, খালবিলে পানি বেড়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশের কলন্দি খাল, কালিকাপুর হয়ে আব্দুল্লাপুর দিয়ে প্রবাহিত জাজি গাং, বাউতলার মরা গাং এবং মোগড়া ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদী দিয়ে শনিবার গভীর রাতে অস্বাভাবিকভাবে ঢলের পানি ঢুকতে শুরু করে।
এতে উপজেলার কালন্দিখাল, জাজি গাঙ ও হাওড়া নদী দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে উপজেলার কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আব্দুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর, সাবেহনগর, খোলাপাড়া, ওমেদপুর, কর্নেলবাজার, ইটনা, শান্তিপুরসহ অন্তত ১৫-২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকার কিছু বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। কেন্দুয়াই মেলার মাঠ এলাকায় ১৫টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, “গতরাত থেকে পানি ঢুকছে। বন্দরের আশপাশে পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে পানি যেভাবে বাড়ছে এতে করে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে দুই দেশের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান বলেন, আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদীর গঙ্গাসাগর পয়েন্টে সকাল ৯টায় পানির সমতল ছিল ৩ দশমিক ৯৩ মিটার। এখানে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ০৫ মিটার। অর্থাৎ পানি বিপদসীমার ২.১২ মিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল একই সময়ে পানির সমতল ছিল ৩ দশমিক ৪৫ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, “রাত থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সকাল থেকে উপজেলার কর্নেল বাজার পার হয়ে ইটনা, খলাপাড়া ও শান্তিপুর এলাকায় অবস্থান করছি। আখাউড়ার হাওড়া নদীর বাঁধগুলো রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় লোকজন ও কারিগরী দিক উভয়ভাবে সকাল থেকে কাজ করছে “
“উপজেলার কর্নেল বাজার-খলাপড়া পার হয়ে ইটনা গ্রামের সড়কে পাশের বিলে পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থায় রয়েছে। সড়কে এখনো পানি উঠেনি।”
তিনি বলেন, “কিছু গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং কয়েকটি পরিবার পানিবন্দি আছে। তবে সংখ্যাটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ১১টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও একটি হটলাইন নম্বর চালু রাখা হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১০ থেকে ১২ কেজি করে জিআর চাল, শুকনা খাবার প্রস্তুত রেখেছি। আর বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির অবনতি হবে না।”
গত বছরের আগস্টে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওড়া নদীর তিনটি বাঁধ ভেঙে উপজেলার প্রায় ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। সেসময় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল। এতে ১৯৫ হেক্টর ফসলি জমি ও প্রায় ১২ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।