Published : 17 Oct 2023, 12:54 PM
কারও একটি হাত নেই। কেউ পায়ের সমস্যায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না। কেউ আবার একটিমাত্র চোখেই দেখতে পান বা ভুগছেন জন্মগত শারীরিক ত্রুটি নিয়ে। তবুও মাঠে নেমে তারা মারছেন চার-ছক্কা, ভাঙছেন প্রতিপক্ষের স্ট্যাম্প।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ মাঠে চলা বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ক্রিকেট সিরিজে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনটি টি-২০ ম্যাচের আন্তর্জাতিক এ সিরিজটি আয়োজন করেছে লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশন। সিরিজটিকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবির ডিজেবল ক্রিকেট কমিটিও।
লালমনিরহাট সরকারি কলেজ মাঠে সিরিজটির উদ্বোধন হয়েছে রোববার। বুধবার ফাইনাল খেলার মধ্যে দিয়ে যা শেষ হবে।
আয়োজকরা জানান, সিরিজে বাংলাদেশ দলে সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা অংশ নিয়েছেন। অপর দিকে ভারতের হায়দারাবাদ বোর্ড অব ক্রিকেট ডিজেবল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে দেশটির বিভিন্ন স্থানের খেলোয়াড়রা খেলছেন।
রোববার সকাল ১১টায় খেলাটির উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন, লালমনিরহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর। এ ছাড়াও ভারতের খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও পৌর মেয়র স্বপন বলেন, গত ১৩ অক্টোবর শুরু হওয়ার কথা থাকলে বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। তাই রোববার ম্যাচটি শুরু করা হয়।
এদিকে শারীরিক বাধা পেরিয়ে ক্রিকেটকে ভালোবেসে মাঠে নামা এই খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে পেরে খুশি উভয় দেশের ক্রিকেটার, দর্শকসহ সংশ্লিষ্টরা।
দর্শকরা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও তারা যেভাবে মাঠে খেলাধুলা করছেন এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একটি বার্তায় পৌঁছায়। সেটা হল- খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা করলে মন মানসিকতা থেকে শুরু করে সবকিছুই ভালো থাকে।
এ ছাড়া খেলাধুলা তরুণ সমাজকে নষ্টের পথ থেকে ফিরিয়ে আনে। আর এ ধরনের সিরিজ তরুণদের খেলাধুলায় আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা যোগাতে সাহায্য করবে বলেও জানান তারা।
মূল ধারার খেলোয়াড়দের থেকে পিছিয়ে থাকা এসব ক্রিকেটারদের জন্য আরও বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করাসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
লালমনিরহাট ইউনাইটেড গোল্ডেন সিটিজেন ফাউন্ডেশন দলের অধিনায়ক সিহাব হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি আমাদের সুযোগ দিত তাহলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও যে দেশের সুনাম অর্জন করতে সেটা দেখিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আমাদের দিকে লক্ষ্যই দিচ্ছে না। আমরা অনুরোধ করব তাদের সুদৃষ্টি আমাদের দিকে যেন থাকে।”
ভারতের ডিজেবল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অধিনায়ক জ্যোতিরাম বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এত অতিথিপরায়ণ যা বলে শেষ করা যাবে না। তাদের দেশপ্রেমেরও কোনো সীমা নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও তারা দেশের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। সত্যি এটি অনেক বড় গর্বের বিষয়।”
বুধবার ফাইনাল ম্যাচ শেষে বৃহস্পতিবার ভারতের খেলোয়াড়রা বুড়িমারী দিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।