Published : 20 Feb 2023, 08:13 PM
অডিও ফাঁসের ঘটনায় ডিভাইসের খোঁজে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের কার্যালয় ও বাসভবনে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে পুলিশ এ দুটি স্থানে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কিছু মেলেনি।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক উপাচার্যের বাসভবন ও কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ সময় উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের অনুরোধে তাদের কার্যালয়েও তল্লাশি চালানো হয়।”
“কোথাও কোনো লুকায়িত ডিভাইস আছে কি-না তা খুঁজে দেখতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ সময় সেখানে ডিভাইস সংক্রান্ত কিছু পাওয়া যায়নি।“
তল্লাশি অভিযানে থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি আননূর যায়েদ বিপ্লব বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনায় উপাচার্যের কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত কিছু পাওয়া যায়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ‘ফারাহ জেবিন’ ও ‘মিসেস সালাম’ নামের দুটি ফেইসবুক আইডি থেকে পাঁচটি ফোনালাপের অডিও ভাইরাল হয়। এরপর রোববার ও সোমবার আল’বিদা ফেইসবুক আইডি থেকে আরও দুটি অডিও ফাঁস হয়েছে।
সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ‘কণ্ঠের মতো’ একজনকে কথা বলতে শোনা গেছে। অডিওগুলোতে কথোপকথনকারীরা টাকার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, নিয়োগ বোর্ড গঠন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। অডিও ফাঁসের ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম’।
তবে এসব ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম ‘কাল্পনিক প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য’ সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার সহধর্মিণীর নামসহ একাধিক ফেইক আইডি খুলে সেখান থেকে একান্তই ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনা সংযোজন-বিয়োজন করে সোশাল ও অন্যান্য মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে।”
“অথচ কথিত নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিতই হয়নি। পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো প্রশ্নপত্রই প্রণীত হয়নি। ইউজিসি প্রয়োজনে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে”, যোগ করেন উপাচার্য।
উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলন
এদিকে উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়। তার ঘণ্টাখানেক পর সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর দুপুর দেড়টার দিকে ১৫ মিনিটের জন্য উপাচার্য কার্যালয়ের তালা খুলে দেয় আন্দোলনকারীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা কার্যালয়ে প্রবেশ করে ডিভাইসের খোঁজে তল্লাশি চালায়।
এ বিষয়ে অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান টিটু দাবি করেন, “উপাচার্য সবাইকে দুর্নীতি করে নিয়োগ দিচ্ছেন। তিনি মাসের পর মাস ক্যাম্পাসে থাকেন না, বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা দিয়ে নিজের বাড়ি বানাচ্ছেন। তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্কেও খারাপ মন্তব্য করেছেন। তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।”