Published : 15 Oct 2023, 09:43 PM
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিসা তৈরির একটি কারখানায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, মালামাল জব্দ ও আগামী ৭ দিনের মধ্যে কারখানাটি অপসারণের নির্দেশ দেয় আদালত।
উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামে জনবসতির কাছে কারখানাটিতে ব্যাটারি ভেঙে সিসা তৈরিতে অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ।
গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির উপরের অংশ খুলে প্লেট বের করছেন; কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করছেন। এসব শ্রমিক পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে অ্যাসিড বের করা ও সিসার কাজ করে রাত-দিন পাশের পুকুরে হাত-মুখ ধুয়ে থাকেন। ফলে পানির রং কালচে আকার ধারণ করেছে। এতে কারখানার আশপাশে ১০/১৫টি পরিবার রয়েছে চরম অস্বস্তিতে। এছাড়া ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে তারা অতিষ্ঠ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার জানিয়েও কোনো ফল মেলেনি ভুক্তভোগীদের। এ জন্য তারা শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় সালাম শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারখানার গন্ধিতো টিকতি পারি নে। চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলছি, আমাদের অসুবিধের কথা কিন্তু কাজ হয় না।”
মো. সালাম ফকির নামে আরেক জন বলেন, “রাত ১০টার পরে সেখানে আগুন জ্বালানো হয়। যে ধুমা হয়, তহন চোখ জ্বলে। শিশু ও বয়স্করা তহন নিশ্বাস নিতে পারে না। আমি শুনছি, এই সিসা তৈরির কারখানা যেনে হয়, হের আশপাশের মানুষের নানা রোগ হয়। গরু-ছাগল মারা যায়। আমরা গরিব মানুষ আমাদের বাঁচান।”
সত্তর বছর বয়সি বৃদ্ধা শান্তি বেগম বলেন, “ঘরে থাহাই যায় না। গন্ধেতে নিশ্বাস নিতি কী যে কষ্ট! বলতি পারব না বাপু।”
এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের আগে সংবাদ সংগ্রহের জন্য কারখানায় যাওয়া সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শ্রমিকদের কেউ কেউ থেকে সটকে পড়েন।
তবে গাইবান্ধা জেলা থেকে আসা মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক শ্রমিক পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, এখানে যারা কাজ করছে সবাই গাইবান্ধা থেকে এসেছে। এক মাস আগে কারখানাটি চালু করা হয়। কারখানা মালিক বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরাতন ব্যাটারি ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে আসেন এখানে।
“আমরা যারা শ্রমিক রয়েছি, ওই ব্যাটারি ভেঙ্গে প্লেইট বাইর করি।”
মোয়াজ্জেম হোসেন আরও জানান, ব্যাটারির প্লেট চুলার মধ্যে দিয়ে কাঠ ও ব্যাটারির বর্জ্যর ওপর সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিলে তা গলতে থাকে। এভাবে সিসা তৈরি হয়। এ কাজে তিনি প্রতিদিন ৫০০ টাকা মজুরি পান।
আরেক শ্রমিক আব্দুল লতিফ। তিনি শুরু থেকেই সংবাদকর্মীদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখছিলেন। মাঝে-মধ্যে তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে ছবিও তুলছিলেন। কিছুক্ষণ পর পর ফোনে কথা বলে কারখানাতে সাংবাদিকদের উপস্থিতির কথা অপর প্রান্তে জানাচ্ছেন।
কারখানাটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেই জমির মালিক ফিরোজা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তিতে জমিটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। এক মাস হলে সিসা তৈরির কারখানাটি গড়ে উঠেছে। পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে অ্যাসিড বের করা ও প্লেট গলিয়ে সিসা তৈরি করায় তাদের কোনো সমস্যা হয় না বলে দাবি জমির মালিকের।
সিসা তৈরির কারখানার কোনো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে কারখানা মালিক সয়নুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বালিয়াকান্দিতে এত সাংবাদিক আমার জানা ছিল না। আমি সবাইকে নিয়ে আমি বসব।”
দ্বিতীয়বার কারখানার বৈধতার প্রশ্নে তিনি একটি জরুরি মিটিং আছেন, এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, “বাঘুটিয়া গ্রামে একটি ব্যাটারি কারখানা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। ওই এলাকার কয়েকজন মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছেন। কিন্তু আমি ওখানে যেতে পারি নাই। আমি ঢাকাতে যাচ্ছি, ঢাকা থেকে ফিরে যাব।”
এদিকে, রোববার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসান।
আদালত কারখানা মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও মালামাল জব্দ করে। সেইসঙ্গে ৭ দিনের মধ্যে কারখানাটি অপসারণের নির্দেশ দেয়।
সহকারী কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এলাকার মানুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধভাবে সিসা তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, “এ ধরনের কারখানা করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, অনুমতি পেতে হলে অবশ্যই কোনো শিল্প এলাকায় কারখানাটি করতে হবে। যার অনুমতিপত্র দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।”