Published : 02 Nov 2022, 08:30 PM
রংপুরের বৃদ্ধাশ্রমে মারা যাওয়া এক প্রকৌশলীর শেষ বিদায়েও ছিলেন না তার সন্তানরা; যা নিয়ে সমালোচনা করেছেন গ্রামবাসী।
গত সোমবার দুপুরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামে প্রকৌশলী এস এম মনসুর আলীর (৮০) মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন দুঃসম্পর্কের কিছু আত্মীয় ও গ্রামবাসী।
মনসুর আলী ওই গ্রামের প্রয়াত আবুল কাশেমের ছেলে।
এর আগে গত রোববার বিকালে রংপুরের হারাগাছ থানার বকসা বৃদ্ধাশ্রমে তার মৃত্যু হয়। নিকটাত্মীয় কাউকে না পেয়ে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠায়।
গৌরনদীর দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের কাজী আশিকুর রহমান রতন, কাজী বাবুলসহ একাধিক গ্রামবাসী বলেন, মনসুর আলী টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন।
তারা আরও জানান, ওই বৃদ্ধের দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। এর মধ্যে বড় ছেলে মহিন সরদার ঢাকায় চাকরি করেন; ছোট ছেলে রাজু সরদার কাতার প্রবাসী।
মনসুর আলীর এক আত্মীয় বলেন, ঢাকায় প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য তাকে (এসএম মনসুর) দুই ছেলে ও বোন সেলিনা বেগম ১০ বছর আগে বাসা থেকে বের করে দেন। এরপর তিনি আর ওই বাসায় ফিরতে পারেননি।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে মনসুর আলীর ছেলে মহিন সরদার এবং বোন সেলিনা বেগমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
রংপুরের হারাগাছ থানার বকসা বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য সচিব নাহিদ নুসরাত বলেন, “চলতি বছরের ২১ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় বৃদ্ধ মনসুর আমাদের এখানে আসেন। এরপর থেকে তিনি এ আশ্রমেই ছিলেন।”
আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম রেজা জানান, গত ২১ জুন ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে এখানে আসেন মনুসর। তিনি এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে কথা বলতে পারছিলেন না। তাছাড়া তার বাম পায়ে ক্ষত ও পচন ছিল। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে চাচ্ছিল না; আশ্রমের লোকজনের অনুরোধে ভর্তি নেয়। সেখানে দেড় মাস ধরে তার চিকিৎসা চলে। চিকিৎসা শেষে তাকে পুরনায় বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন সুস্থ্ থাকার পর আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গত রোববার মারা যান।
রেজাউল করিম আরও জানান, মনসুর আলীর মৃত্যুর পর আশ্রম কর্তৃপক্ষ তার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। পরিবারের কাউকে না পেয়ে শেষে তার সৎ খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। মনসুর আলীর মৃত্যুর বিষয়টি খালাত ভাইকে জানানো হলেও তিনি বা তাদের কেউ আসেননি।
তখন বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে মনসুর আলীর লাশ গ্রামে পৌঁছে দেয়।
গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থাকেন না। মনসুর সাহেবের সন্তানরা ছোটবেলায় গ্রামে এসেছিলেন। তাদের সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না।
“লাশ দাফনের জন্য আনার পর জানতে পারি, সন্তান বা পরিবারের কেউ আসেননি। কেন আসেননি তা বলতে পারবো না।”