Published : 09 Aug 2022, 04:31 PM
সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার ফরিদপুর পৌরসভার সড়কগুলো সংষ্কারে গত চার বছরে নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। ফলে সড়কগুলোর অবস্থা হয়েছে বেহাল; খানাখন্দে অনুপোযুক্ত হয়েছে চলাচলের।
তবে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কের কাজ দ্রুতই শুরু হবে বলে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পৌরসভার ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮৬৯ সালে ২২.৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ফরিদপুর শহরকে নয়টি ওয়ার্ডে ভাগ করে পৌরসভায় রুপান্তর করা হয়। ১৯৮৩ সালে এই পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ১৯৮৬ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়।
২০০৯ সালে এই পৌরসভার জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৩৭ জন। ২০১৯ সালের তা বেড়ে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩১ জনে দাঁড়ায়।
বর্তমানে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে ৬৬.৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ফরিদপুর পৌরসভায় মোট ৪৪৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ১২৫ কিলোমিটারের অবস্থা বেহাল বলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম জানান।
চার বছর বা তারও বেশি সময় ধরে সংস্কার না হওয়া সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম-অম্বিকা চরণ মজুমদার সড়ক। এটি ঝিলটুলী এলাকার জেলা পরিষদের ডাকবাংলো থেকে শুরু হয়ে মহাকালী পাঠশালার মোড়ে গিয়ে মিশেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের পাশাপাশি চরকলাপুর ও পূর্বখাবাসপুর লঞ্চঘাট জোড়া সেতু হয়ে শহরে প্রবেশের জন্য সংযোগ সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয় রাস্তাটি। সংস্কার না করায় সড়কের পুরো অংশে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বখাবাসপুর লঞ্চঘাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকদিন হলো সড়কটি মেরামত হচ্ছে না। বাড়ি থেকে বের হয়েই সড়কে নেমে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।”
বৃষ্টি হলে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার সুফি আব্দুল বারি সড়কটি একবারেই ব্যবহারের যোগ্য থাকে না বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ঠিকাদার দুলাল হোসেন।
কয়েক বছর হলো সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না, তাই খানাখন্দে ভরে গেছে বলে জানান তিনি।
একই এলাকার কানিজ সড়কে চলাচল করা রীতিমত ‘বিপদজ্জনক’ বললেন, স্থানীয় বাসিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গাজী মোকসেদুর রহমান।
“এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার একটি সড়ক। পৌরকর বাড়লেও নাগরিক সুবিধা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।” আক্ষেপের সুরে বলেন এ শিক্ষক।
একইভাবে সংষ্কারের অভাবে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের বাড়ি থেকে চুনাঘাট সেতু পর্যন্ত বেড়ি বাঁধের উপর নির্মিত সড়কে। বেহাল চুনাঘাটা সেতু থেকে আদমপুরগামী সড়ক, অম্বিকাপুর রেল ক্রসিং থেকে শুরু করে ভাসানচরগামী সড়ক ও মহিম স্কুলের সামনে দিয়ে শোভারামপুর সুইজ গেট সড়কও।
শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজার ও কোতোয়ালি থানার সামনের গুরুত্বপূর্ণ থানা রোড নামের সড়কটিও চলাচল করার অবস্থায় নেই; এ পথে বাজারগামী যাত্রী ও পথচারীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়।
দক্ষিণ গোয়ালচামট এলাকার মোল্লাবাড়ি সড়কটির পিচ উঠে গিয়ে কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে মেঠোপথের রূপ ধারণ করেছে; এ অবস্থা মোতাহার ফকিরের চায়ের দোকানের মোড় থেকে ফরিদপুর বাইপাস পর্যন্ত।
এ এলাকার বাসিন্দা সাজেদুল করিম তাতা বলেন, “ভাড়া বেশি না দিলে এই সড়কে রিকশা-ইজিবাইক আসে না। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে হয় পায়ে হেঁটে।”
ভাটিলক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, মোতাহার হোসেন সড়কে বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু পানি জমে থাকে, সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না। ইয়াছিন সড়কের শহীদ মিনারের কাছে ও মোল্লাবাড়ির কাছেও জমে থাকে পানি।
এ সব সড়ক ছাড়াও থানার মোড় থেকে ময়ড়া পট্টিগামী সড়ক, বাদাম পট্টি এলাকার সড়ক, চক বাজার থেকে পূর্ব খাবাসপুরগামী মুক্তিযোদ্ধা হরেন্দ্র নাথ সড়ক, টিটিসির মোড় থেকে ব্রাহ্মণকান্দা সড়ক, সিংপাড়া সড়ক ও ফরিদপুর মেডিকেল থেকে চর কমলাপুরগামী সড়কগুলির অবস্থাও বেহাল।
তবে নিজস্ব তহবিল থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ছয় কিলোমিটার সড়কের কাজ অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম।
তিনি বলেন, “২০১৮ সালের শেষ দিকের পৌরসভার সড়কগুলো সংস্কারে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। ফলে সংস্কারের অভাবে সড়কগুলোর অবস্থা হয়েছে বেহাল অবস্থা হয়েছে। বর্তমানে মেডিকেল কলেজ থেকে অনাথের মোড় পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
“মমিন ম্যানশন থেকে অম্বিকাসড়কসহ রাজেন্দ্র কলেজ পর্যন্ত সড়কের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ বেহাল সড়কগুলি সংস্কার করা হবে।”
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, “ইতোমধ্যে বেশকিছু সড়কের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় ও বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজে একটু ধীরগতিতে এগুচ্ছে।
“আমরা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ চেয়েছি, সেটি হলে দ্রুতই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।” যোগ করেন এ জনপ্রতিনিধি।