Published : 12 Feb 2023, 05:49 PM
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে পাবনার মানুষ।
রোববার সকালে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের সই করা মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হচ্ছেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
আর কোনো দল থেকে এই পদে মনোনয়পত্র জমা দেননি।
রোববার সকালে রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের খবর প্রকাশ হলে মুখে মুখে তা ছড়িয়ে পড়ে।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবরে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন আনন্দ শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ উল্লাস ও আনন্দ মিছিল। জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পথচারী ও রিকশাচালকদের মিষ্টিমুখ করান।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, “সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আমাদের অহংকার ও গর্বের। তিনি একজন নিরহংকার ও সজ্জন মানুষ। এমন একজন ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত। একজন যোগ্য মানুষকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়েছে।”
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, “বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এমন একজন সৎ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করায় পাবনাবাসী আবেগাপ্লুত। এমন সংবাদে শুধু আমরা নই সমস্ত পাবনাবাসী আনন্দিত।”
পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসম আবদুর রহিম বলেন, “আমরা আনন্দিত, সত্যই দীর্ঘদিন পর পাবনাবাসী রাষ্ট্রপতি পেল।”
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের বাল্যবন্ধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, “তার এই প্রাপ্তি আমার জীবনের সেরা আনন্দ। এর চাইতে খুশি কোনোদিন হইনি। ওর এই অর্জনে বন্ধু হিসেবে ও পাবনাবাসী হিসেবে আমি গর্বিত।”
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বৃহত্তর পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা আনন্দিত।”
পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, “খবরটি জানার পর আমরা অনেকটাই অবেগাপ্লুত। এই প্রাপ্তি পুরো জেলাবাসীর প্রাপ্তি।”
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে পেশা শুরু করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় থেকে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়; যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন সদস্য।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে দীর্ঘদিন চাকরি শেষে যুগ্ম-সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক। চুপ্পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মোহা. আরশাদ আদনান (রনি) একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন।
আরও পড়ুন