Published : 27 Aug 2023, 11:58 PM
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীকে হেনস্থা এবং সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর শিক্ষকদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
রোববার বেলা ১২টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সংগঠনের বরিশাল মহানগর শাখার কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বিজন সিকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সন্তু মিত্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব সুজন আহমেদ, সদস্য লামিয়া সাইমন, সরকারি ব্রজমোহন কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সদস্য মিনহাজুল ইসলাম ফারহান, সরকারি আলেকান্দা কলেজে শাখার সংগঠক ফারহানা আক্তার।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রী নিবাসে ২৩ অগাস্ট রাতে দুই ঘণ্টা ধরে কক্ষে আটকে রেখে র্যাগিংয়ের নামে এক শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থী অজ্ঞান হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই ঘটনার তথ্য সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে।
নেতারা বলেন, মেডিকেল কলেজের এই ঘটনা বিছিন্ন বা নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের হলগুলোতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। গেস্টরুম-গণরুমে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এখন নিত্যদিনের কর্মসূচি।
নেতারা আরও বলেন, র্যাগিং কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে না। প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করতে চাইলে সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে বের না করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বক্তারা সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলার নিন্দা জানান। একইসঙ্গে তারা, সারাদেশে শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও র্যাগিংমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের দাবি জানান।
২৩ অগাস্ট রাতে তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী নীলিমা হোসেন জুঁই দুইবার কক্ষে ডেকে নিয়ে র্যাগিংয়ের নামে ‘মানসিক নির্যাতন’ চালালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে তার মায়ের অভিযোগ।
ওই ছাত্রী শনিবার অভিযোগ জানাতে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যান। এ সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে সাত সাংবাদিক কলেজ কর্তৃপক্ষের হামলার শিকার হন।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, তারা যখন অধ্যক্ষের কক্ষে ওই ছাত্রীর বক্তব্য নিচ্ছিলেন; তখন কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ বাকী বিল্লাহ ও প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা ও অফিস সহকারীদের কয়েকজন সাংবাদিকদের চড়-থাপ্পর ও পিটিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাদের বের করে দেন।
পরে কলেজ অধ্যক্ষ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমঝোতা হয়।
এ ঘটনায় রোববার চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নিপীড়ন বিরোধী সেল চায় ছাত্র ফেডারেশন
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলার সহসভাপতি হাছিব আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রাইদুল ইসলাম সাকিব এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে শিক্ষকরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন তারা ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন।
নেতারা বলেন, “ভুক্তভোগী পরিবারের উপস্থিতে কলেজ প্রশাসন সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা ঘটনার ধামাচাপা দিতে চাইছেন।”
বিবৃতিতে ছাত্র ফেডারেশন নেতারা সাংবাদকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের অপসারণ দাবি করেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠনের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:
বরিশাল মেডিকেলে ‘র্যাগিং’ তদন্তে কমিটি
বরিশাল মেডিকেল: ‘র্যাগিং’ নিয়ে যা বললেন ছাত্রীর মা
বরিশাল মেডিকেলে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার ৭ গণমাধ্যমকর্মী