Published : 24 Sep 2022, 12:00 AM
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিলের লাল শাপলা ও পদ্ম ফুল সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
‘পদ্ম ছেঁড়া বন্ধ করি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করি’ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার সকালে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তারা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শৈলেন্দ্রনাথ মণ্ডল, ব্যাংক কর্মকর্তা মাধব চন্দ্র ব্রহ্ম, শিক্ষক শেখ আনিচুর রহমান, বাগেরহাট থেকে আসা পর্যটক তারক কুমার সাহা, তার স্ত্রী হ্যাপি সাহা, বরিশালের বানারীপাড়া থেকে আসা আব্দুস সবুরসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন।
এ সময় শৈলেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, মে মাস থেকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিল বেষ্টিত জমিতে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি এসে যায়। প্রাকৃতিকভাবে এ পানিতেই প্রতি বছর জন্ম নেয় পদ্ম ও শাপলা। রঙে রঙিন হয়ে উঠে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিলগুলো। বিলের কালো পানিতে লাল শাপলা ও পদ্মের অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে ভ্রমণপিপাসুদের।
“কিন্তু এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয়রা পদ্ম ও শাপলা ছিঁড়ে বিক্রি দিচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। বাইরে থেকে আসা পর্যটকেরা লাল শাপলা ও পদ্মফুল দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন; হতাশ হয়ে ফিরছেন।”
শিক্ষক শেখ আনিচুর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মে ধন্য হয়েছে টুঙ্গিপাড়া। জায়গাটি এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা সদরের অদূরে বাঘিয়ারকূল ও ডাকাতের ভিটা বিল।
বিল দু’টিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুলে পদ্মকলি, ফুল ও লাল শাপলা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
“পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিসহ নৌযান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সার্বক্ষণিক প্রশাসনিক নজরদারি ও পদ্ম বিলের অমূল্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো করা হলে লাল শাপলা ও পদ্ম ফুল সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।”
বাগেরহাট থেকে আসা পর্যটক হ্যাপি সাহা বলেন, “টুঙ্গিপাড়ায় এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। কারণ বিলে কোনো পদ্মই দেখতে পেলাম না। ভ্রমণের জন্য এখানে কোনো নৌকার ব্যবস্থাও নেই। শাপলা ও পদ্ম সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।”
বরিশালের বানারীপাড়া থেকে আসা আব্দুস সবুর বলেন, “পরিবার নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। ডাকাতের ভিটা ও বাঘিয়ারকূল বিলে ঘুরতে এসে দেখি পদ্ম নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি। এগুলো সংরক্ষণে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।”
ওই পর্যটক বলেন, বাঘিয়ারকূল ও ডাকাতের ভিটা বিলকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাহলে টুঙ্গিপাড়ায় আসা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসবেন। এতে এই এলাকায় বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কিন্তু কিছু মানুষ পদ্মফুল ও শাপলা ছিঁড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এ জন্য পর্যটকেরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে, এটা দুঃখজনক।”
টুঙ্গিপাড়ার পদ্ম ফুল ও লাল শাপলা রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন আল মামুন।