Published : 11 Jul 2023, 08:52 PM
রাজশাহী মহানগরীতে পরিচালিত এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, শহরের ‘৩৭ শতাংশ’ বাড়ি ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশার প্রজননক্ষেত্র।
রাজশাহীর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ওই সমীক্ষায় সংগৃহীত নগরীর ৭৫টি বাড়ির নমুনার মধ্যে ২৮টিতেই এইডিসের লার্ভা মিলেছে।
সোমবার বিকালে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়।
সেখানে বলা হয়, গত ৬ জুন থেকে রাজশাহী মহানগরীতে এইডিস মশার প্রজননক্ষেত্র শনাক্ত করতে কয়েকটি টিম মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে। নগরীর ৫টি ওয়ার্ড থেকে ১৫টি করে মোট ৭৫টি বাড়ির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায়, ৭৫টির মধ্যে ২৮টি বাড়িতেই এইডিস মশার লার্ভা রয়েছে।
এসব স্থান থেকে ডেঙ্গু জ্বর ছড়ানোর আশঙ্কার কথা জানিয়ে মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনকে চিঠিও দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল বাশার তালুকদার বলেন, “জানুয়ারি থেকেই রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়তে শুরু করে। এ পর্যন্ত মোট ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে এই বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৫ জন।”
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে ‘র্যানডম সিলেকশনে’র মাধ্যমে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনায় এজিপ্টাই ও এলবোপিক্টাস এই দুই প্রজাতির লার্ভা মিলেছে। যার মধ্যে এজিপ্টাই মশার লার্ভাই বেশি। দুটো মিলে ডেঙ্গু ছড়াতে থাকলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে।
তাই লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর মশার বংশবিস্তার রোধ, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে আলোচনা সভা করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নগর ভবনের সরিৎ দত্ত গুপ্ত সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় ওয়ার্ড সচিব, মশক পরিদর্শক ও সুপারভাইজাররাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার রোধ কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজশাহীর অবস্থা তুলনামূলক ভালো উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, “সতর্কতা হিসেবে আমাদের কর্মীরা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগরবাসীকে সচেতন করবেন, যেন কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে। শহরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় আরও জোর দেওয়া হবে এবং এইডিসের লার্ভা ধ্বংসে ড্রেনগুলোয় স্প্রে করা হবে। এরই মধ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে। মসজিদে জুমার নামাজের আগে খুতবায় এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে ইমামদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহম্মদ জানান, এ পর্যন্ত যেসব ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা সবাই ঢাকা থেকে এসেছেন। অর্থাৎ ঢাকায় অসুস্থ হয়ে বা সংক্রমিত হয়ে তারপর রাজশাহীতে এসেছেন।
এসব ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটিকে ‘ডেডিকেটেড’ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ৫ সদস্যের চিকিৎসক টিমও গঠন করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় টিকাসহ সব ওষুধ হাসপাতালে আছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সও রয়েছেন বলে জানান তিনি।